ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে ক’দিন আগে গাঁদা ফুলের প্রতি ঝোপা বেচেছেন ১৫০ টাকায়। এখন বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ফুল চাষিরা বলছেন, হরতাল আর অবরোধে একদম দাম পাচ্ছি না। ফুল চাষ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই এত লোকসান খেয়ে বাচা যাবে না। কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলচাষি শাহাদাত হোসেন। উপজেলার গান্না বাজার ও বালিয়াডাঙ্গা বাজারে প্রতিদিন বসে ফুলের হাট। দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুলের চাহিদা মেটাচ্ছে এই অঞ্চলের ফুলচাষিরা।
ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, কিছুদিন আগেও ফুলের দাম খুবই ভালো ছিলো। কিন্তু হরতাল আর অবরোধের কারণে ফুলের বাজারে ধস নেমেছে। কয়েকদিন আগে গাঁদা ফুল প্রতি ঝোপা ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে সে ফুল এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গোলাপ প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা,এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা। জারবেরা বিক্রি হত ৮ থেকে ১০ টাকা আর এখন বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ বছর ২৫৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে গাঁদা ফুলের। ফুল চাষিশরিফুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে গাঁদা গোলাপসহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করেছেন। মহামারী করোনার সময় ফুলের ব্যবসায় ধস নেমেছিলো। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারণে আবার ফুলের ব্যবসায় ধস নেমেছে। ফুল ব্যবসায়ি হাফিজুর রহমান জানান, হরতাল-অবরোধের আগে ফুলের ভালো দাম পেয়েছে চাষিরা। কিন্তু এখন একদমই দাম পাচ্ছে না। পরিবহন সমস্যায় ফুল কেনা যাচ্ছে না। ফুল সঠিক সময়ে না পৌঁছাতে পারলে লোকসান হয়।
ফুলের রাজধানী খ্যাত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয় প্রতি বছর। বিশেষ করে জারবেরা গ্লালোডিয়াস, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ,কাদাফুল লিলিয়াম ফুল চাষে নজর কেড়েছে এ এলাকায়। চাষিরা তাদের জমিতে গড়ে তুলেছেন ফুলের বাগান। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানেও পাঠানো হচ্ছে এই ফুল।বিশেষ করে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ শে ফেব্রুয়ারি ও পহেলা ফাল্গুন, বাংলা নববর্ষসহ বিভিন্ন দিবসে প্রায় অর্ধ-কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা হয়।শুধু ফুল বিক্রিই নয় দুর-দূরান্ত থেকে অনেকে দেখতে আসেন ও বিকালে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান ছবি তুলতে। ছবি তুলার পরে তারা পছন্দের ফুল কিনে থাকেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে তিন বিঘা জমিতে প্রথম জারবেরা ফুলের বীজ রোপণ করেন কালীগঞ্জের বড় ফুলচাষি টিপু সুলতান। তিনি বীজ আনা হয় ভারত থেকে। ফুল ক্ষেতের উপর ছাউনি দিতে একই দেশ থেকে আমদানি করা হয় বিশেষ ধরনের পলিথিন। যা তৈরি হয় ইউরোপের দেশ গুলোতে। রোপণের ৩ মাস পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। একটি গাছ একাধারে দুই থেকে তিন বছর ফুল দেয়।
কৃষিবিদ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জারবেরা ফুল চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী। বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়। শীত মৌসুমে উৎপাদন বেশি হয়। এ ছাড়া দেশের বাজারে এই ফুলে দাম ও চাহিদা বেশি। তবে এই ফুল লাভজনক হলেও খরচ বেশি হওয়ায় চাষ করতে পারছেন না সাধারণ কৃষকরা।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজগর আলী জানান, দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে ফুল চাষে যশোরের গদখালীর পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জ এবং। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয় ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জে।