রাজশাহীর তিনজন এমপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে লড়বেন। এ জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত এই এমপিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দলের ১৫ জন নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হক এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমানও আছেন। আর রবিবার (৩ ডিসেম্বর) যাচাই-বাছাইয়ের সময় শারমিন আক্তার মাহিয়া নিপার দাখিলকৃত ভোটারদের স্বাক্ষর জাল শনাক্ত হওয়ায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেছেন রাজশাহী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
রাজশাহী-৩ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে এ আসনের এমপি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পবা-মোহনপুরের বাইরের লোক এসে এলাকাকে অশান্ত করতে চান। তাই তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি এনামুল হক। এনামুল ২০০৮ সাল থেকেই এ আসনের এমপি। এনামুল ছাড়াও বাবুল হোসেন নামের দলের আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
রাজশাহী-৫ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। তার বিপক্ষে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান। দারা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এ আসনের এমপি হয়েছিলেন। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ছিটকে পড়লে মনোনয়ন পান মনসুর রহমান। তবে এবার বাদ পড়েছেন ডা. মনসুর রহমান। নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। তবে দারাকে ভোটের মাঠে ছাড় দিতে নারাজ বর্তমান এমপি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। তাই প্রার্থী হয়েছি।’ রাজশাহী-৫ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবাইদুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাজশাহীর অন্য আসনগুলোতেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছড়াছড়ি।
রাজশাহী-১ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. আখতারুজ্জামান, গোলাম রাব্বানী, শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ও শারমিন আক্তার মাহিয়া নিপা। নিপা হলেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। আর আয়েশা আখতার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী। তবে রবিবার (৩ ডিসেম্বর) যাচাই-বাছাইয়ের সময় শারমিন আক্তার মাহিয়া নিপার দাখিলকৃত ভোটারদের স্বাক্ষর জাল শনাক্ত হওয়ায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেছেন রাজশাহী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। তবে নায়িকা মাহির মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়ে গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও তার সমর্থিতরা জানিয়েছেন তিনি আপিল করবেন। এ প্রতিবেদন রবিবার দুপুরে লেখা অবস্থায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছিল।
রাজশাহী-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, দলের কর্মী আবু রায়হান মাসুদ ও রেজাউন নবী আল মামুন।
রাজশাহী-৬ আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাঁর বিপক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা রায়হানুল হক ও দলের কর্মী ইস্রাফিল বিশ্বাস। এই আসনে চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলামও প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) হয়ে রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু। বিএনএম-এ যোগ দেওয়ার পর মন্টুকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী-২ ও রাজশাহী-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে ২০১৮ সালে পদত্যাগ করা নেতা মো. শাহাবুদ্দীন।
রাজশাহীর আসনগুলোতে বিভিন্ন দলের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, রাজশাহী-১ আসনে মো. শামসুজ্জোহা (বিএনএম), মো. আল-সাআদ (বিএনএফ), জামাল খান দুদু (তৃণমূল বিএনপি), নুরুন্নেসা (এনপিপি) ও বশির আহমেদ (মুক্তিজোট) ও মো. শামসুদ্দীন (জাতীয় পার্টি)।
রাজশাহী-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি), আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী (জাসদ), সাইফুল ইসলাম স্বপন (জাতীয় পার্টি), কামরুল হাসান (বিএনএম), মো. শামীম (তৃণমূল বিএনপি), ইয়াসির আলিফ বিন হাবিব (মুক্তিজোট), মো. মনিরুজ্জামান (গণফ্রন্ট) ও মারুফ শাহরিয়ার (বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি)।
রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সইবুর রহমান (এনপিপি), সোলাইমান হোসেন (জাতীয় পার্টি), বজলুর রহমান (বিএনএফ), আবদুস সালাম খান (জাতীয় পার্টি), এনামুল হক (মুক্তিজোট), মো. মনিরুজ্জামান (গণফ্রন্ট) ও নিপু হোসেন (স্বতন্ত্র)। রাজশাহী-৪ আসনে আরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম রায়হান (বিএনএম), জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না (এনপিপি), মতিউর রহমান (বিএনএফ) ও আবু তালেব প্রামাণিক (জাতীয় পার্টি)।
রাজশাহী-৫ আসনে প্রার্থী হতে আরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মখলেসুর রহমান (গণফ্রন্ট), আলতাফ হোসেন মোল্লা (বিএসপি), শফিকুল ইসলাম (জাকের পার্টি), শরিফুল ইসলাম (বিএনএম) ও আবুল হোসেন (জাতীয় পার্টি)। রাজশাহী-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জুলফিকার মান্নান জামী (জাসদ), মহসিন আলী (এনপিপি), রিপন আলী (জাকের পার্টি), শামসুদ্দিন রিন্টু (জাতীয় পার্টি) ও আবদুস সামাদ (বিএনএম)।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে মোট ৬০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাইলে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর।