নানা আন্দোলন সংগ্রাম ও দাবির প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ২২ বছর পর এবার বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে সরাসরি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়নের দিক থেকে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে পিছিয়ে থাকা বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) এবং বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে এবার ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হয়েছে।
এজন্য মনোনয়ন ঘোষণার পর আওয়ামী লীগসহ সাধারণ ভোটাররা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একাধিকবার আনন্দ মিছিলও করেছেন। কিন্তু ক্রমেই ওই তিনটি আসনে জোট-মহাজোটের হিসেবে নৌকার প্রতীকের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে একপ্রকার অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই তাদের কাছে নির্বাচনের আমেজ অনেকটাই ম্লান হতে চলেছে। কারণ ওইসব আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি মহাজোটর শরিক দলের হেভিওয়েটের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনটি আসনের মধ্যে যেকোন দুটি আসন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের হাত ছাড়া হতে পারে, এমনই আতঙ্ক বিরাজ করছে সমর্থক ভোটারদের মাঝে। এমন কি মহাজোটের অন্যতম শরীক দল জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টির হেভিওয়েটের তিন নেতাকে ঘিরে অস্বস্তিতে ভুগছেন তিনটি আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল-২ ও ৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি দুটি আসনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এছাড়া বরিশাল-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য ও দলের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু।
সূত্রমতে, বরিশাল-৩ আসনটি গত দুইটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এবারও মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাপাকে ওই আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এজন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরদার খালেদ হোসেন স্বপনকে ডামি প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে বলে প্রথম থেকেই গুঞ্জন ওঠে। কিন্তু বরিশাল-২ আসনে নৌকা মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসের রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। তাই মনোনয়ন পাওয়ার পর তার জয় শতভাগ নিশ্চিত বলে বরিশালজুড়ে নানা আলোচনা ছিলো। এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষসময়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আকস্মিক বরিশাল-২ ও বরিশাল-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর রাজনীতির হিসেব-নিকেশে মহাজোটে জট লাগতে থাকে। মনোনয়ন ঘোষণার পর দুটি আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে আনন্দ ছিলো, রাশেদ খান মেনন ও গোলাম কিবরিয়া টিপুকে ঘিরে ক্রমেই সেই আনন্দে ভাটা পরেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বরিশাল-৩ আসনে জাপা মনোনীত হেভিওয়েটের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুকে মহাজোটের হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হলে, বরিশাল-২ আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ওই দুইটি আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের কপাল পুড়তে পারে। একইভাবে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনটি অতীতে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানেও সেখানে জাপার সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা লাঙলের প্রার্থী হয়েছেন। পাশাপাশি নৌকা পেয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও মহাজোটের শরীক দলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দলের সভাপতির নির্দেশে আব্দুল হাফিজ মল্লিক কয়েকবার তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত এবারও কি হবে, তা নিয়ে সর্বস্তরের ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।
তবে বরিশাল-২, ৩ ও ৬ আসনে নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীরা জানিয়েছেন, দল ক্ষমতায় থাকলে আমরা থাকবো। আমাদের চাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের ভালবেসে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। এখন তিনি যে নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত দিবেন, সেই মোতাবেক কাজ করবো।