শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত খেলাধুলার বিকল্প নেই। অথচ শহরের শিশুদের এসব করার সুযোগ কোথায়। পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগটাই পাচ্ছে না তারা। ইট, কাঠ পাথরের জঞ্জালে চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখা যায় তাদের। মাঠে কিংবা পার্কে না, রাস্তাতেই এখন এলাকার শিশুরা খেলছে। শহরের বেশির ভাগ জায়গাতেই মাঠ নেই বলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা রাস্তায় খেলছে। অনেকেই খেলার সুযোগ পাচ্ছে না এবং যার প্রভাব পড়ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর। ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা পাচ্ছে শিশুরা। নগর পরিকল্পনাকারীরা বলছেন, পরিকল্পনায় স্থান পাচ্ছে না শিশুদের বিনোদন। একটা সময় ছিল যখন গ্রাম-শহর সব জায়গাতেই শিশুর খেলাধুলা, ছোটাছুটিসহ বিনোদনের সব ধরনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহরাঞ্চলে নানা কারণে শিশুদের এই সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে। একটা খাঁচার মতো ভ্যানে চেপে স্কুল, স্কুলের গণ্ডি থেকে আবার সেই খাঁচায় চেপে বাসা নামের আরেকটি খাঁচায় ফেরা। ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’-এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকার ২৯ শতাংশ শিশু কোনো খেলাধুলাই করে না এবং ৪৭ শতাংশ শিশু দিনে গড়ে তিন ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় টেলিভিশন দেখে। ৬৪ শতাংশ স্কুলে খেলাধুলার কোনো ক্লাসই নেওয়া হয় না। বেশির ভাগ স্কুলেই খেলার মাঠ নেই। ৬৭ শতাংশ শিশুর বাড়ির কাছাকাছি খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই। ৩৭ শতাংশ শিশু ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করে। এক গবেষণায় ৪ হাজার ২০০ শিশুর কাছে তাদের আশা কী, জানতে চাওয়া হয়। ৮৩ শতাংশ শিশু জানায়, তারা এলাকায় একটি খেলার মাঠ চায়। ৭৩ শতাংশ শিশু চায় এলাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠন। ৭৬ শতাংশ শিশু এলাকায় শিশুপার্ক চায়। ৬৭ শতাংশ শিশু শরীরচর্চা কেন্দ্র চায়। ৩ শতাংশ শিশু পাঠাগার ও ২ শতাংশ শিশু চিড়িয়াখানা করার কথা বলে। কোনো জরিপ না থাকলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার ৯৫ শতাংশ স্কুলে খেলার মাঠ নেই বলে জানা যায়। নগরে শিশুদের বিনোদন ও খেলার মাঠ না থাকায় তারা যতটুকু অবসর পায়, সে সময় বিভিন্ন ডিভাইসে আসক্ত থাকে। এ জন্য তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এখন প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শিশুবান্ধব নগরের জন্য প্রয়োজন সুশাসন। আর শিশুদের জন্য সিটি করপোরেশনের বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে।