২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সহিংসতা থেকে বাঁচতে বহু রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট আজ একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের সীমানায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংঘাত ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে, আবার কেউ কেউ বাংলাদেশি পাসপোর্ট জোগাড় করে মানবিক কাজকে অমানবিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে রোহিঙ্গারা, বাংলাদেশে তাদের কোনো নিরাপদ ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নেই বলে সুরক্ষা, নিরাপত্তা, পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া এবং জীবিকার তাগিদে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য বিপজ্জনক সমুদ্রপথ বেছে নিচ্ছে।
‘কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নৌপথে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যখন নৌকাপথে যাত্রা শুরু হয়। সে সময় তরুণ পুরুষ যাত্রীদের হার বেশি ছিল।’ ‘কিন্তু এখন রোহিঙ্গাদের মধ্যে সপরিবারে বাংলাদেশ ত্যাগের হার বাড়ছে। ফলে বিপজ্জনক এসব নৌযাত্রায় বাড়ছে রোহিঙ্গা শিশুদের হারও। 'সাধারণত, বর্ষার শেষে অক্টোবর মাস থেকে নৌকায় চেপে এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় রওয়ানা দিয়ে থাকেন রোহিঙ্গারা। এমন যাত্রায় নৌকায় ভিড় বেশি হওয়া, পর্যাপ্ত পানীয় জল না থাকা, নৌকা ডুবে যাওয়া বা মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ার মতো ঝুঁকির সম্মুখীন হন অনেকে।' আবার মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও অনেকে নৌকায় চেপে বিপদে ভরা সাগরের পথে রওয়ানা দিচ্ছে। কেননা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরগুলিতে জীবনযাপনের মান অনুন্নত এবং এবছর, রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য সাহায্যের অর্থের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ কমিয়েছে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কর্তৃপক্ষ একাধিক বার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবার কথা বললেও বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগোয়নি। এই অবস্থায় তারা আর কী করতে পারে, তাই বাধ্য হয়েই তারা নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে দেশান্তরী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ নেয়া। শুধু বাংলাদেশ সরকার নয়, পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজেদের দেশে, নিজেদের গৃহে ফিরতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে তাদের নিজ বাসভূমে সম্মানের সাথে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের প্রতি ন্যায়বিচার, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসঙ্গে কাজ করার এটাই উপযুক্ত সময়।