আজ ৭ ডিসেম্বর, পীরগঞ্জ থানা মুক্ত দিবস। পীরগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসে উজ্জল হয়ে আছে এই দিনটি। মূলত পীরগঞ্জ থানা শত্রু মুক্ত হয় ৭১ এর ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে। শুক্লপক্ষের অন্ধকার যবনিকা কেটে গিয়ে সূর্যোদয়ের পর দ্রুতগতিতে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। পরদিন ৭ ডিসেম্বর হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী নারী-পুরুষ দীর্ঘদিনের কষ্ট আর ক্লেদ ভূলে গিয়ে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। তাই ৭ ডিসেম্বর পীরগঞ্জ থানা শত্রু মুক্ত হিসেবে পরিগনিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী প্রবীণদের মতে পূর্ব হতে পাক সেনাদের আস্তানা ছিল থানা সদরে। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মিত্র বাহিনীর জলপাই রংএর ট্যাং বহর ছুটে আসে দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত পার হয়ে। পীরগঞ্জ থানার পশ্চিমাঞ্চল এর খালাশপীর,কাদিরাবাদ ও ত্রি-মোহনী ব্রীজের আশপাশে অবস্থান নিয়ে সূর্যাস্তের পূর্বেই এলো পাথাড়ী গোলা বর্ষণ শুরু করে পীরগঞ্জ থানা সদরে অবস্থানরত পাক সেনাদের আস্তানার উপর। রাত গভীর হলে এক সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে পাক সেনারা পিছু হটতে শুরু করে। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পাক সেনাদের একটি অংশ রংপুর-ঢাকা মহা সড়কের বড়দগাহ্ নামক স্থানে মিত্র বাহিনীর অপর অংশের কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অপর অংশটি গাড়ি বহর নিয়ে মহাসড়ক ধরে বগুড়া সেনা নিবাসের উদ্দেশ্য পালিয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন একটি অংশ জীবনের ভয়ে অস্ত্র ও পোষাক খুলে পায়ে হেঁটে গ্রামীন পথ ধরে পালিয়ে যায় মিঠিপুর এলাকায়। মাদারগঞ্জের কাছাকাছি গিয়ে এরা জনগনের হাতে ধরা পড়ে নাজেহাল হয়। এদিকে ধীর গতিতে এগিয়ে আসে মিত্র বাহিনীর সাঁজোয়া বাহিনী। এক পর্যায়ে গোলার আওয়াজ থেমে যায়। গভীর রাতেই জলপাই রং এর ট্যাংকবহর নিয়ে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সার্থক জোয়ানরা পীরগঞ্জ থানা সদরে প্রবেশ করে বিজয়ের বেশে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিবসটি পালনে বর্নাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও দিবসটি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন এই দিনটি নানা কর্মসুচির মাধ্যমে পালন করে আসছে। আজও কয়েকটি সংগঠন দিবসটি পালনে শোভাযাত্রাসহ নানামুখী কর্মসুচি গ্রহন করেছে।