জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে চলতি মৌসুমে আলু রোপনের পর বীজ পচে প্রায় ৪০ বিঘা জমির চারা উঙ্কুর গজানোর আগেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্র্যাক কোম্পানির ক্যারেজ জাত আলু বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কৃষক। উপজেলার ইটাখোলা বাজারের ব্র্যাক কোম্পানির আলু বীজ ডিলার ওসমান উজ-জোহার দোকান থেকে এসব আলুর বীজ কিনে রোপনকরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাঁরা।
জানাগেছ, উপজেলার কলিঙ্গা গ্রামের ১০-১২ জন কৃষক ব্র্যাক কোম্পানির ক্যারেজ জাতের আলুর বীজ কিনেছিলেন ইটাখোলা বাজারের উসমানের দোকান থেকে। কৃষকদের দাবি নিয়ম মেনে আলু বীজরোপণ করেও প্রায় ৪০বিঘা জমির আলু বীজের চারা উঙ্কুর গজানোর আগে পচে গেছে। কোনো ক্ষেতে চারা উঙ্কুর গজে ওঠার পর গাছগুলি ঢলেপরে মারা যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলেছেন, আমরা ইটাখোলা বাজারের ওসমান মন্ডলের দোকান থেকে ব্র্যাক সীডের ক্যারেজ জাতের আলুর বীজ কিনেছিলাম। প্রতি বছর তাঁর দোকান থেকেই ব্র্যাক কোম্পানির আলুর বীজ কিনে রোপণ করি। এবার ওই ডিলারের দোকান থেকে ক্যারেজ আলুর বীজ কিনে রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। ডিলার আমাদের ব্র্যাকের আসল নাকি নকল বীজ দিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সরেজমিন গত মঙ্গলবার কলিঙ্গা গ্রামের মাঠে আলুর জমিতে গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার পুরা মাঠজুড়ে আলুক্ষেত। ওই মাঠে অনেক কৃষকের জমিতে আলুর চারা বড় হয়েছে, পরিচর্যা করছেন। আবাব ওইসব ক্ষতিগ্রস্থ ১০-১২ জন কৃষকের জমির আলু বীজের চারা গাছ গজানোর আগেই নষ্ট হয়েছে। তারা হতাশা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, সোসাল মিডিয়ায় (ফেসবুকে) দেখেছি এবার এলাকার একটি হিমাগারে জনৈক অসাধু বীজ ব্যবসায়ী বিভিন্ন সীড কোম্পানির মোড়কে লোকাল আলুবীজ হিসেবে প্যাকেট করতে দেখেছিলাম। সেই আলুর বীজ এই বাজারে এসেছে কিনা তা চিহ্নিত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শারফুল ইসলামের তিন বিঘা, তোরাফ মন্ডলের তিন বিঘা, ছানাউল মন্ডলের সাড়ে তিন বিঘা, ইয়াছিন ফকিরের আড়াই বিঘাসহ আরো অনেকেই বলেন, আমরা আগাম বুকিং দিয়ে ওসমানের দোকান থেকে ব্র্যাকের ক্যারেজ জাতের আলুবীজ কিনে জমিতে রোপণ করেছি। রোপণের ১৫ দিন পার হলেও আলুর বীজের গাছ গজায়নি। মাটি সড়েদেখি ভিতরে আলুবীজ পচে গেছে। এ মাঠে ১০-১২ জন কৃষকের প্রায় ৩০-৪০বিঘা জমির একভাগ আলুর গাছ উঠেছে, বাঁকী চারা গজায়নি। আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব জমিতে নতুন করে গ্যানুলা আলু রোপণ করার জন্য বীজ সংগ্রহ করেছি।
এ বিষয়ে ইটাখোলা বাজারের ডিলার ওসমান উজ জামান বলেন, চলতি মৌসুমে ব্র্যাকের "এ" গ্রেড ১শত ৯৩ বস্তা, "বি" গ্রেড ৪শত ৩ বস্তা ক্যারেজ আলুর বীজ বরাদ্দ পেয়েছি। এই বীজ বিভিন্ন এলাকার ৬৯ জন কৃষকের নিকট বিক্রি করেছি। এরমধ্যে ১০-১২ জন কৃষক আলু রোপনের পর বীজ পচার অভিযোগ করেছে। আলুর বীজ সঠিক ছিল। কৃষকরা রোপণের সময় কোনো ক্রুটির কারণে এ অবস্থা পতে পারে। ব্র্যাকের বীজ কোম্পানির টেরিটরি অফিসার আলুর জমি দেখতে গিয়েছিলেন তিনি ভালো বলতে পারবেন।
ব্র্যাকের টেলিটরি অফিসার জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জমি দেখেছি। তাঁরা আলু রোপণের পর দেরিতে সেচ দিয়েছেন। আবার অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছে। আলুর বীজ কেটে রোপন করার কারনে রাসায়নিক সারের সংস্পর্শে আলু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকেরা তাদের নিজের দোষ স্বীকার করছেন না। এ ছাড়া সব আলুর বীজ ব্র্যাকের নয়। ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরা জানি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।