বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে প্রয়োজনীয় খাবার না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাচ্ছে না অনেক শিশু। জন্ম থেকে দুই বছর শিশুর খাবারের তালিকা ও খাদ্য গ্রহণের হারের ওপর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নির্ভর করে। বয়স অনুযায়ী চাহিদা বিবেচনায় খাবারেরও শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। ৬-২৩ মাস বয়সী শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে আট ধরনের খাবারের স্বীকৃতি রয়েছে। এসব খাবার দিনে কতবার খাওয়াতে হবে তা নিয়েও রয়েছে নির্দেশনা। তবে দেশের ওই বয়সী শিশুদের মধ্যে পুষ্টির জন্য ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য খাবার পাচ্ছে ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চার বছর আগের তুলনায় ন্যূনতম খাদ্য পাওয়া এসব শিশুর হার কমেছে। এতে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে শিশু চরম পুষ্টিনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ছে বলে পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। নবজাতক ও শিশুর খাওয়ানোর পদ্ধতির (ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চাইল্ড ফিডিং) অবনতির কথা খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে। চলতি বছর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) সর্বশেষ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০২২’-এ বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচিতে ৪৫ শতাংশ শিশুর ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য খাদ্য পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। এদিকে জাতীয় পুষ্টিসেবা ও বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পুষ্টি নিয়ে কাজ করা সরকারের ২২টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মোটা দাগে কাজ করছে ১৩টি। প্রত্যক্ষ পুষ্টি কার্যক্রমের মাধ্যমে অপুষ্টি উত্তরণের কাজ চলে। এর মধ্যে সরাসরি খাবার প্রদান, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, এমআইএনটি পাউডার, মিনারেল খাওয়ানোর মতো কর্মসূচি রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের এ ধরনের কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। প্রত্যক্ষ কার্যক্রমের মধ্যে চিকিৎসাও রয়েছে। অন্যদিকে পরোক্ষ কার্যক্রমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বা ভিন্নভাবে সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বহুমুখী কর্মসূচি পালন করা হয়। দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পুষ্টির বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৩০০টি কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে সরকারের বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা রয়েছে ৩১টি, যার মধ্যে ১৯টি ওপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। প্রতি বছরই পুষ্টি কার্যক্রমের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মোটা অংকের বরাদ্দ রাখা হয়। সরকারের বেশকিছু বহুমুখী পুষ্টি পরিকল্পনার সমন্বয়ে এনএনএস কর্মসূচি চলমান রয়েছে। পুষ্টিবিষয়ক কার্যক্রমে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কঠোর পর্যবেক্ষণ জরুরি। কেননা ৬-২৩ মাস বয়সী শিশুদের মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি খাবারে বৈচিত্র্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে। ফলে মানুষ কোনো কোনো আদর্শ খাবার বাদ দিয়ে দিচ্ছে। বস্তুত শিশুর পুষ্টিকর খাবারে অনিশ্চয়তা থাকলে তাতে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যাহত হবে। তাই সরকারের যেসব কর্মসূচি রয়েছে তাতে আরো জোর দিতে হবে। এছাড়া শিশুর পুষ্টিনিরাপত্তার স্বার্থে নতুন কার্যক্রমে উদ্যোগী হতে হবে, যেন পরিবারগুলো শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে সক্ষম হয়।