গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪জন কর্মচারী নিয়োগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে এই ৪টি পদে চাকুরী দিতে প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ ১৬জন প্রার্থীর কাজ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক, এলাকাবাসী ও চাকুরী বঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় চাকুরী বঞ্চিত রনি বিশ^াস ও সুদিপ্ত রায় বাদী হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), গোপালগঞ্জের শিক্ষা অফিসারসহ ৩০ জনকে বিবাদী করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে গত ২২ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈকেও বিবাদী করা হয়েছে। বাকী সকল বিবাদীগণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বলে বাদীরা তাদের মামলায় উল্লেখ করেছেন। এদিকে এই মামলার পরে গত ২৯ নভেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ও এলাকার গণমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির হলরুমে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ উল্লেখিত নিয়োগ বাতিল করে ঘুষের টাকা ফেরত দিবেন বলে ঘোষনা দেন। এ বিষয়ে একটি রেজুলেশনও করা হয়। রেজুলেশনে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ স্বাক্ষর করেন। এই রেজুলেশনের পরে প্রায় ২সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ নিয়োগ বাতিল ও ঘুষের টাকা ফেরত না দেওয়ার কারণে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনগণ আজ বুধবার (০৬ ডিসেম্বর) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মাঠে জড়ো হয়। তারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিয়োগ বাতিল ও ঘুষের টাকা ফেরত না দেওয়া হলে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষনা দেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মামলার বাদী রনি বিশ^াস বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর একটি পত্রিকায় রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন কম্পিউটার ল্যাপ অপারেটর, একজন নৈশ প্রহরী, একজন আয়া ও একজন অফিস সহায়ক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সে মোতাবেক আমি অফিস সহায়ক পদে চাকুরীর জন্য আবেদন করি। গত ১৬ নভেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার আগে রাতে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কথা বলে আমাকে চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ আমার কাছ থেকে সাড়ে ৫লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু আমাকে চাকুরী না দিয়ে কিশোর বিশ^াস নামে একজনকে চাকুরী দিয়েছে। এখন তারা আমার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। আমি আমার টাকা ফেরতসহ এই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। অপর বাদী সুদিপ্ত রায় বলেন, আমি নৈশ প্রহরী পদে আবেদন করেছিলাম। আমাকে চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ আমার কাছ থেকে ৬লক্ষ ঘুষ নেন। আমি জমি বিক্রি করে এই টাকা দিয়েছিলাম। এরা আমাকে চাকুরীও দেয়নি, টাকাও ফেরত দিচ্ছেনা। এ জন্য আমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র অভিভাবক রনজিত মজুমদার ও কমল ওঝা বলেন, প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ ২৯ নভেম্বরের সভায় এই নিয়োগ বাতিল করে ১৬জন প্রার্থীর ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন তারা গড়িমসি করছেন। আমরা এই নিয়োগ বাতিল, ঘুষের টাকা ফেরতসহ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছি। তা না হলে আমরা আগামীতে এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামবো। তারা আরো বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈ বিদ্যালয়ের টাকা মেরে কোটি টাকার আলিশান বাড়ি করেছেন। অফিস সহায়ক পদে চাকুরী পাওয়া কিশোর বিশ^াসের কাছে ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ঘুষ গ্রহণ ব্যাপারে রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কলাবাড়ি ইউনিয়নের অনেক ব্যক্তির সাথেই আমার টাকা পয়সার লেনদেন রয়েছে। কখন কে কোন কাজে আমাকে টাকা দিয়েছে তাহা আমি এই মুহুর্তে বলতে পারবো না। গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে একটি মামলা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। মামলার কপি এখনো আমি হাতে পাইনি। হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।