বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি বাণিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসে ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে পচনশীল ও বানিজ্যিক আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। উচ্চ শুল্ককরের পণ্য এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। মোটরপার্টস, ফেব্রিকস, আয়রন, স্টিল, আপেল ও মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিকারকরা বেনাপোল দিয়ে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। আমদানি কমে যাওয়ায় এসব পণ্য থেকে প্রায় ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা যায়।
চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। গত ৪ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২৪০ কোটি টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কাস্টমস বিসয়ক সম্পদক আব্দুল লতিফ বলেন, মূল কারণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না। ডলার সঙ্কটের কারনেই আমদানি বানিজ্যে এ ধরনের ধ্বস নমেছে। ফলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আমদানিকারক আমিনুল ইসলাম আনু বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য ১১০ দশমিক ৪২ টাকা। এলসির সমুদয় টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করলেও ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। এলসি করতে গেলে পিআই অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের উচ্চ মহলে ধর্না দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে এলসি করতে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ছিল ১১২ টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। বাণিজ্যিক পণ্যের এলসি না হওয়ায় আমদানি বাণিজ্য কম গেছে ও রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আশা করছি বাণিজ্যে আবারও গতি ফিরবে বেনাপোল বন্দরে।’
সি অ্যান্ড এফের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা জানান, ভারতের নাসিক থেকে আসা আপেলসহ অন্যান্য উচ্চ পচনশীল পণ্যের চালান আসতে প্রায় তিনদিন সময় লাগে। ফলে পচে যায় অধিকাংশ কার্টুনের ফল। পচা মালের রাজস্ব আদায় করায় অধিকাংশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশসেন সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ডলার সঙ্কট চলছে। ডলার সঙ্কট দেখিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এলসি দিতে চাচ্ছে না। আর এলসি দিলেও ডলারের রেট অনেক বেশি। ডলার বাইরে থেকে কেনার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে তারা। এলসি না হওয়ার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি অনেক কমে গছে।’
বেনাপোলের সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে ধস নামার কারণ আমদানি বাণিজ্য কমে যাওয়া। এলসি করতে ব্যাংক ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার কারণে এলসি কমে গেছে। এলসি করতে ব্যাংকে অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে নিরুৎসাহী হচ্ছে।’
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘জেনেছি ডলার সঙ্কটে এলসি না হওয়ার আমদানি কম হচ্ছে। আগের তুলনায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্য অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে মোটরগাড়ি ও মোটরপার্টস থেকে ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। আপেল সহ অন্যন্য ফলে আমদানিতে ২৪ কোটি ও ফেব্রিকস আমদানিতে ২১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। সর্বমোট ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি আছে।