আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে রংপুরের মডেল হাসপাতালে রুপ নিয়েছে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চলছে মেজর সার্জারি, সিজার, হার্নিয়া, এপেন্ডিসাইটিস, প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা। এছাড়াও চালু রয়েছে টেলিমেডিসিন, যক্ষা ও চক্ষু রোগ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা। প্রতিদিন বর্হি বিভাগ, জরুরী বিভাগ ও আন্ত: বিভাগে চিকিৎসা নেন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী। সুন্দর পরিপাটি দৃষ্টিদন্দন ও পরিচ্ছন্ন এ হাসপাতালে বর্তমানে ২০ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ায় খুশি এ উপজেলার সাধারন মানুষ। ফলে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে রোগীদের।
জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। বাক্সবন্দি থাকা এক্সরে মেশিনসহ সব যন্ত্রপাতি চালু করা হয়। গত ৬ মাসে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ৪ হাজার জন রোগী। জরুরী ও বর্হি বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা নেন ৫০০ জন। প্রতিদিন বর্হি বিভাগে চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ঔষধ দেয়া হয় প্রায় ৫ শতাধিক রোগীকে। প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা নিয়েছেন ২৪৫০ জন রোগী। হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারী করা হয়েছে ২৮৯ জনকে। এছাড়াও উপ-স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ ডেলিভারী করানো হচ্ছে। মেজর সার্জারি করা হয়েছে ২৭ জনকে। এ হাসপাতালে রয়েছে যক্ষা রোগ নির্ণয়ে আধুনিক মানের জিন এক্সপার্ট মেশিন, এক্সরে মেশিন, অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি। মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষা ও চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রেখেছে এ হাসপাতালটি। জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সম্প্রতি চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা ভিডিও কলের মাধ্যমে এসব রোগীকে চিকিৎসা-সেবা দেয়া হয় প্রতিদিন। রয়েছে এনসিডি কর্ণার, আয়ুর্বেদিক বিভাগ, ব্রেষ্ট ফিডিং কর্ণার, এএসসি কর্ণার, কমিউনিটি আই সেন্টার, শিশু কর্ণারসহ আলাদা আলাদা চিকিৎসা সেবার জন্য নতুন নতুন সংযোজন। চোঁখের রোগীদের বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চশমা সরবরাহ করা হচ্ছে হাসপাতাল থেকে।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, কোলাহল মুক্ত পরিবেশে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। কেউ টিকিট নিয়ে ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র করাচ্ছেন, কেউ ঔষধ তুলছেন। ফুল, ফল ও ঔষধী গাছে ভরা পুরো হাসপাতাল চত্ত্বর। এ হাসপাতালটিতে মোট মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে ২২৪টি। এর মধ্যে ১৫৯ কর্মরত থাকলেও খালি পদ সংখ্যা ৬৫টি। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৫ জনের স্থলে রয়েছে ২ জন, ওয়ার্ড বয় ৪ জনের স্থলে রয়েছে ১জন। নেই মালিসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদের জনবল।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আসা অন্নদানগরের রবিউল ইসলাম, সুমি বেগম বলেন, এই হাসপাতালে অনেক ভালো ডাক্তার বসেন। তাই অনেক দুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসছি। চিকিৎসা ও ঔষধ দুটোই পেলাম। এর আগেও এসেছি, ভালো চিকিৎসা পেয়েছি।
উপজেলার চালুনিয়া গ্রামের ছামসুল হক বলেন, আমি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত। প্রতি মাসে আমাকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার ঔষধ কিনে খেতে হতো। এখন পীরগাছা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে হেল্থ কার্ড করে দিয়েছে। প্রতি মাসে আমি বিনামূল্যে এক মাসের ঔষধ ও চিকিৎসা পাচ্ছি। আমার মতো অনেকে এখন এ সুবিধা নিচ্ছে। এতে করে আমরা বেশ উপকার পাচ্ছি। সবচেয়ে বেশি উপকার পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের রোগী ও তার স্বজনরা।
কথা হয় অনন্তরাম গ্রামের নাসরিন বেগম, জোলেখা বেগমসহ কয়েকজনের সাথে। তারা জানান, আগের মতো সেই হাসাপাতাল নাই। বর্তমানে এখানে চিকিৎসা-সেবার মান উন্নত হয়েছে। সব ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যায়। চোখের রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ ও চশমা দেয়। অনেক দামি দামি ঔষধ পাওয়া যায়। তাই আমরা অনেক দিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।
জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শরিকুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আমাদের সব যন্ত্রপাতি সচল রয়েছে। চিকিৎসাসেবা কোন কমতি নেই। বড় কোন জটিল রোগী ছাড়া সব ধরনের অপারেশন এখানেই করা হয়। আমরা গরীব ও অসহায় রোগীদের উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ঔষধপত্রে ব্যবস্থা করে থাকি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বিশে^শ^র চন্দ্র বর্মন বলেন, এ হাসপাতালে নতুন নতুন অত্যাধুনিক মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারিতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছি। যেকোন ডেলিভারি রোগীর জন্য ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমি নিজে সরবরাহ করছি। আমাদের বেশি সমস্যা তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদা দিয়েছি।