প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, ‘আমি ঘুষ নিয়েছি প্রমাণ করতে পারলে টাকা ফেরত দেব।’
গতকাল শুক্রবার মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রথমত আমি চাকরি দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেই নাই। যারা এই মিথ্যা ছড়াচ্ছে, তারা যদি প্রমাণ করতে পারে আমি ঘুষ নিয়েছি, তাহলে আমি নিজে ওদের টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।কেউ যদি আমার কথা বলেও টাকা নেয়, তবে প্রমাণ সাপেক্ষে সেই টাকা ওঠানোর ব্যবস্থা করে দেব। তাই বলতে চাই, যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়াচ্ছে, তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, তাদের কথার কোনো ভিত্তি নাই।’ চাকরির জন্য দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনজনকে বাসায় ডেকে নিয়ে পেটানোর অভিযোগও রয়েছে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ানসহ অন্যদের অভিযোগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রীকে ৯৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তাঁরা।চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে দেননি প্রতিমন্ত্রী। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিমন্ত্রী টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে তাঁদের মারধর করেন। ওই বাসা থেকে দেয়াল টপকে পাশের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে ঢোকেন আবু সুফিয়ান। পরে তাঁকে আটক করে রমনা থানায় সোপর্দ করে ডিবি। ভুক্তভোগী তিনজনের মধ্যে আছেন আবু সুফিয়ান বিশ্বাস, জাহিদ হাসান ও নাসির হাওলাদার।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী নিজে আমাদের রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন। এক পর্যায়ে আমরা পালিয়ে এলেও সুফিয়ান আত্মরক্ষার্থে ডিবি কার্যালয়ের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকেন।’
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সুপারিশ করতে যান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের আবু সুফিয়ান বিশ্বাসসহ কয়েকজন। ২০২২ সালের ৮ জুন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বাসায় যান তাঁরা। ওই সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ৪৮ জনকে নিয়োগের জন্য ছয় কোটি টাকায় রফা হয়। তাঁর ভাইয়ের ছেলে লিটন ও গাড়িচালক মোমিনকে টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তখন অগ্রিম হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের উপস্থিতিতে লিটন ও মোমিনের কাছে ৪৮ জন চাকরিপ্রার্থীর জন্য ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন আবু সুফিয়ান ও নাসির হাওলাদার নামের এক চাকরিপ্রার্থী। তবে ওই ৪৮ জনের কেউই চাকরি পাননি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।’
এদিকে প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনের অফিস সহায়ক মো. মমিন চাঁদা দাবি এবং নিরাপত্তাকর্মীর অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন ওই চারজনের বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা মডেল থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আবু সুফিয়ান নামের একজন ডিবি হেফাজতে আটক রয়েছেন। আমাদের কাছে এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।’