১৯৭১ এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে দেশ মাতৃকার টানে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অর্ন্তগত কোচ বিহার জেলার মহেন্দ্রগঞ্জে একের পর এক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে থাকে টকবগে যুবকরা। মুক্তিযোদ্ধের ১১নং সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল ভারতের মহেদ্রগঞ্জ। সেখানে ট্রেনিং নিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর সেনানীরা।
মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসূত্রে জানাযায়, ১৯৭১ এর ১০ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর ব্রিগ্রেড কমান্ডার হরদেব সিং ক্লেয়ার এর নির্দ্দেশে জামালপুর শহরে মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক অধিনায়ক ইউসুফ আলীর নের্তৃত্বে ৮ডিসেম্বর সকালে জামালপুরের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে তার কোম্পানীসহ নাসির কোম্পানী, বদি কোম্পানী, আলম কোম্পানী সহ মিত্র বাহিনীর সদস্যরা একত্রিত হয়ে জামালপুর সদরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শহরের প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পিটিআই) ছিল পাকসেনাদের চরম শক্তিশালী দূর্ভেদ্য ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতে মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক অধিনায়ক ইউসুফ আলীর নির্দ্দেশে মুক্তিযুদ্ধে মৃতঞ্জয়ী খেতাব প্রাপ্ত বীর প্রতীক জহুরুল হক মুন্সি নিজের জীবন বাজি রেখে আত্মসমাপন পত্র নিয়ে পাক সেনা ক্যাম্পে বীরর্দপে উপস্থিত হয়ে ক্যাম্প কমান্ডার কর্ণেল সুলতান খানের কাছে চিঠি পৌছান। পাকসেনা অফিসার সুলতান খান চিঠি পেয়ে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। তিনি আত্মসমাপণ অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের দূত বীর প্রতীক জহুরুল হক মুন্সিকে সারাদিন বেঁধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে সন্ধ্যায় তার শরীরে টাইম বোমা বেঁধে ব্রম্মপুত্র নদের পাড়ে ফেলে দেয় পাক সেনারা।
এ সংবাদ পেয়ে মুক্তিবাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর সদস্যরা সিংহের মত গর্জে উঠে শুরু করেন তুমুল আক্রমন। রাত দিন যুদ্ধ চলতে থাকে। ভারতীয় বোমারু বিমান এসে পিটিআই পাকসেনা ক্যাম্পে মুহুমুহু বোমা বর্ষণ করতে থাকে। অবশেষে ১০ডিসেম্বর পাক-হানাদার বাহিনীকে চুড়ান্ত ভাবে পরাজিত করে জামালপুর সদর সপ্তম দফা শত্রু মুক্ত করেন। জামালপুর মুক্তি যুদ্ধের পাক-হানাদার বাহিনীর ২৩৫ জন সৈন্য নিহত হয় এবং ৩৭৬ জন পাক-হানাদার সৈন্য আত্মসমর্পন করে। এই যুদ্ধে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর ১১জন বীরযুদ্ধা শহীদ হয়ে ছিলেন। এ সময় হাজারো মুক্তিগামী জনতা জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে। জামালপুর শহরে স্বাধীন বাংলার বিজয়ী পতাকা পৎ পৎ করে উড়তে থাকে।