বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। জ্বালানি নিরাপত্তা একটি কল্যান রাষ্ট্রের প্রথম ও আবশি^ক অগ্রাধিকার। একটা দেশের জনগনের জ্বালানির প্রাপ্যতা এবং জ্বালানি অধিকার যত বেশি সুরক্ষিত সেই দেশ ততটাই উর্ধ্বমুখী। আর আমাদের দেশে জ্বালানিসংকটের বাইরে বিদ্যুৎ খাতের বড় সমস্যা হলো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ যাকে বলে, সেটি কখনোই সাধারন গ্রাহকরা পান না। কিন্তু ভিভিআইপি গ্রাহকদের কথা আলাদা। আমাদের দেশে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ৮ শতাংশ গ্রাহককে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়। এবং লোডশেডিং নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা পাওয়ার সেলের জরিপে উঠে আসা তথ্যেও ভিত্তিতে, ১৫ হাজার ২৪৫ জন গ্রাহকের ওপর একটি জরিপ করা হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৯১ শতাংশ গ্রাহক আবাসিক খাতের। অন্যরা শিল্প, বানিজ্য ও কৃষিসেচ খাতের। জরিপে ইতিবাচক যে দিকটি উঠে এসেছে, সেটি হলো প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অনলাইনের মাধ্যমে বা মুঠোফোনসেবার ব্যবহার বাড়ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎসেবা নিয়ে বিতরণ সংস্থার কাছে ফোনে বা সরাসরি গিয়ে নিয়মিত অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। এমনকি বিল টেম্পারিং করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ও পাওয়া গেছে। সরকার একদিকে বিদ্যুৎ খাতে মোটা অঙ্কের ভতুর্কি দিচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহকদেরও বেশি দামে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে বলাই যায়, সরকারের অন্যান্য খাতের মতো বিদ্যুৎ খাতেও স্বচ্ছ ও জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে।
একটি দেশ এ অবস্থায় চলতে পারে না। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহনের কথা এখনি ভাবতে হবে। ফলে যেকোনো খাতের উন্নয়নে গ্রাহক ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের সমস্যা গুলো সমাধান বা বাস্তবায়নে আর্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো, বিদ্যুৎ খাতের চুরি ও অপচয় কমবে না বরং গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি বাড়তে থাকবে। তাই সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, বিদ্যুৎ খাতের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক। যেহেতু রাষ্ট্রের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা এমন একটি বিষয়, যার ওপর সাময়িক ও ভৌগোলিক নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই এই সংবেদনশীল খাতে অর্থনৈতিক ও সার্বিক জাতিয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিষয় বিবেচনা করা দরকার। গত এক দশকে এর ব্যপক ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। যার ফলে বিদ্যুৎ খাতে এক ধরনের অরাজক অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।