দখল-দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে বাংলার নদ-নদী। প্রায়ই নদী দূষন ও দখলের খবর গনমাধ্যমে প্রকাশ হয়। বিআইডব্লিউটিএর এসব বিষয়ে দেখভাল করার কথা থাকলেও তাদের দায়িত্বহীরতার কারনে দখলদাররা নদী দখল অব্যাহত রেখেছে। সারাদেশে নদী-নালা, খাল-বিল অবৈধ ভাবে দখল হওয়ার কারনে পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ মিল-কলকারখানা বর্জ্য ও বসতবাড়ি, হাট-বাজারের নোংরা দূষিত পানি, মৃত প্রাণী অহরহ নদ-নদীতে ফেলা হচ্ছে। শহর এলাকায় বস্তিবাসীদের অপরিকল্পিত অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ভবনের টয়লেট ড্রেনের সঙ্গে সংযোগ করে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে করে নদ-নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী ও জলজ প্রানী ধ্বংস হচ্ছে। দখল দূষনের মাধ্যমে একদিকে নদী গুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে।
নদী দূষণকারী শুধু প্রভাবশালী কলকারখানার মালিকরাই নয়, সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্নভাবে নদ-নদী দূষণ করছে। দেশের নদীগুলোর পাড়ে গড়ে ওঠা সিটি শহর ও শত শত পৌর এলাকায় বর্জ্য অপরিকল্পিতভাবে ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এই বর্জ্যগুলো ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে সংযোগ করা হয়, যা নদী দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। দেশের বেশির ভাগ মিল-কলকারখানার বর্জ্য নিজস্ব শোধনাগার না থাকায় দূষণকারীরা নদীগুলোকে তাদের নিজস্ব সম্পদ মনে করে নদী দূষণ করে পরিবেশ নষ্ট করছে। ফলে নদী দখল এবং দূষণ ঠেকানোর জন্য সরকারি যেসব সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া আছে, দৃশ্যমান এসব অনিয়ম দেখেও তাদের চুপ থাকার রহস্য উন্মোচিত হওয়া দরকার।
অনেক সময় সরকারের পক্ষ থেকে নদ-নদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে প্রভাবশালীদের বাধার সম্মুখীন হয়ে আর বেশিদূর এগোতে পারে না। তাই নদী রক্ষায় শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, বাস্তবায়নও করতে হবে। সেজন্য নদীর তীরে মিল-কলকারখানা নির্মাণ বন্ধ করাসহ ইতোপূর্বে যেসব মিল-কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার নেই সেগুলোর শোধনাগার তৈরি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়াও সমুদ্রের পাড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প নদীদূষণ ও পরিবেশ দূষণের কারণে বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে কেবল সরকারের একার পক্ষে দেশের নদ-নদী রক্ষা করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও নদ-নদী রক্ষার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ ও মানবজীবনে এর গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাই সচেতন না হলে একটি-দুটি কর্তৃপক্ষের পক্ষে নদী দূষণ ও দখল রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই সবাইকে যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা আশা করব, সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সম্মিলিত ও জোরদার ভূমিকা রাখবেন।