সরকার দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে আরো অর্ধশতাধিক গ্যাস কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সিসমিক সার্ভের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ১১৬টি লিডের (কূপ খননের জায়গা) তালিকা এর মধ্যে পেট্রোবাংলার কাছে পাঠিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে স্থলভাগে আরো ৫০ থেকে ৬০টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ করা হয় আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকিটা আমদানীকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার কারণে ২০৩০ সালে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা হতে পারে সাড়ে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। বিশাল এই চাহিদার কথা চিন্তা করেই সরকার দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এলএনজি আমদানি আরো বাড়াতে কাতার ও ওমানের পর মার্কিন কম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে। গত দুই দশকে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় ব্যাপকভাবে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো যায়নি, যার ফলে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে। চাহিদা সামাল দিতে সরকারকে ২০১৮ সাল থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ছে। দেশে চলমান ডলার সংকটের জন্য একটি কারণ হিসেবেও উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানিকে দায়ী করছেন অনেকে। তাই সরকার আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে গ্যাস উৎপাদনের দিকে আরো নজর দিচ্ছে। সূত্র জানায়, ব্যাপকভাবে কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল। তাহলে এর সুফল এখন পাওয়া যেত। কূপের অবস্থান নির্ণয় করার বিষয়ে খুবই অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রকৌশলী ও ভূতত্ত্ববিদের প্রয়োজন হয়। সঠিক স্থানে কূপ খনন করা হলে গ্যাস উৎপাদন এবং গ্যাসের রিজার্ভ বাড়ে। এখন দেশে গ্যাসের চাহিদা বাড়ার কারণে কূপ খনন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে গ্যাস কূপ খননের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করাও খুবই জরুরি গত বছরের শুরুতে স্থলভাগে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছিল পেট্রোবাংলা। এসব কূপ থেকে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ২০২৫ সাল থেকে আরো ১০০ কূপ খননের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। চলতি বছরই কূপগুলোর চূড়ান্ত চিহ্নিত করার কাজ শেষ হবে। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন, অনুমোদন ও উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কম্পানিগুলোকে কাজ দেয়া হবে। ২০২৫ সালের আগেই এই প্রস্তুতি শেষ করা হবে। ২০২৫-২০৩০ সাল পর্যন্ত এই ১০০টি কূপ খনন করা হবে।’ এদিকে এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব জানান, পেট্রোবাংলার কাছে ১১৬টি সিসমিক লিডের তালিকা দেয়া হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। বাপেক্সের বিভিন্ন সার্ভের রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা করেছে। ১১৬টি গ্যাসকূপ খননের জায়গার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিলেট, ভোলা, কুমিল্লা ও ফেনীর অঞ্চলগুলো রয়েছে।’ অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, সম্ভাবনাময় ১০০টি লিড চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন দেশের ও দেশের বাইরের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে চূড়ান্ত হবে ২০২৫-২০২৮ সাল পর্যন্ত কতগুলো কূপ খনন করা হবে। যাচাই-বাছাই করে এই সময়ের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি কূপ খনন করা হবে। পরবর্তী সময়ে বাকিগুলো খনন করা হবে। তবে গ্যাসের পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত কূপগুলো চূড়ান্ত করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গ্যাসের উৎপাদন ও মজুদের বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না। আশা করা যায় এগুলোতেও ভালো গ্যাসের সন্ধান আমরা পাব।’