ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু নিয়ে আসা চোরাকারবারী ‘ডাঙ্গোয়াল' বাহিনীর আতংকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লালমনরিহাটের আদতিমারী উপজেলার দূর্গাপুর সীমান্তের প্রায় ৬ শতাধিক কৃষক। ডাঙ্গোয়ালরা ভারত থেকে গরু এনে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত দিয়ে নিয়ে যায়। এতে করে ধান, ভুট্টা, বাদাম, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ডাঙ্গোয়ালদের হাত থেকে এসব ফসল রক্ষার রাত জেগে ফসলের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন তারা। সীমান্ত এলাকার কৃষকরা বর্ডার গার্ড বাংলাদশে (বিজিবির) নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করেি পাচ্ছেন না কোন প্রতিকার। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে দুর্গাপুর সীমান্তে গেলে আতঙ্কিত কৃষকদের তাদের ফসল ফলানো ক্ষেতে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কৃষকরা সাংবাদিকদের দেখে দৌড়ে এসে বিভিন্ন অভিযোগ করে বলেন, ডাঙ্গোয়ালরা গভীর রাত থেকে ভোর পযর্ন্ত ভারতীয় গরু বাংলাদেশে পাচার করে নিয়ে আসেন। এই ডাঙ্গোয়ালরা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতীয় গরুগুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যান। তারা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির ভয়ে সড়ক পথ ব্যবহার না করে ফসল নষ্ট করে ক্ষেত দিয়ে এসব গরু বাংলাদেশে পাচার করে নিয়ে আসেন। এতে ফসলের ক্ষেত প্রায় সম্পুর্নভাবে নষ্ট হচ্ছে। সীৃামান্ত এলাকার কৃষকরা সাধারনত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ধান, সবজি, ভুট্টা ও তামাকরে চাষ করে থাকেন।ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী ডাঙ্গোয়ালদের কারনে সীমান্ত এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে শীতকালে ডাঙ্গোয়ালদের আতংকে থাকতে হয় সীমান্ত এলাকার কৃষকদের। দুর্গাপুর সীমান্তের কৃষক কাওছার মাহমুদ বলেন, ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু পাচার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার কারনে গেল এক সপ্তাহে তার দেড় বিঘা জমির ফসল সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে গেছে।গভীর রাতে ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ফসলের ক্ষেত দিয়ে গন্তব্যে নিয়ে চলে যায়। ‘সীমান্তে আমার আরো ৫ বিঘা জমির ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তিনি। মাঝে মাঝে রাতে এসে রাত জেগে ফসলের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। একই এলাকার শমসের আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, তিনি সীমান্তে দুই বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছেন। ডাঙ্গোয়ালদের এই গরু পারাপারের কারনে প্রায় এক বিঘা জমির ফসল প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি এক বিঘা জমির ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। রাত হলেই ডাঙ্গোয়ালদের কারনে তাদের আতংকে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা গ্রামবাসি বিজিবির নিকট অভিযোগ করেছি কন্তিু কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ডাঙ্গোয়ালরা দূধর্ষ ডাকাত প্রকৃতির হয়ে থাকে এ কারনে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদও করতে কেউ পারছে না বলেও জানান তিনি। কৃষক ফজলে করীম (৪৮) বলেন, ডাঙ্গোয়ালদের কারনে এখন ভুট্টা, তামাক, বোরো ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একমাস আগে আমন ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শীতকালে ঘনকুয়াশা নামলে ডাঙ্গোয়ালরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারনে সীমান্ত এলাকার জমি থেকে তারা আশানুরুপ ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। ‘সীমান্তে ডাঙ্গোয়ালরা সিন্ডিকিট দ্বারা পরিচিালিত হয়। বিজিবি তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থাও নিচ্ছে না, তাই পরিবারের সবাই রাত জেগে ফসল পাহারা দেই। দূর্গাপুর ইউপি সদস্য মেহেরুল ইসলাম বলেন, তিনি কয়েকজন ডাঙ্গোয়ালকে ফসলের ক্ষেত দিয়ে গরু আনতে নিষেধ করেছেন কিন্তু আমার সে কথা তারা কোন ভাবেই শুনছেন না। বিজিবি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবেন বলে কৃষকদের আশ্বস্ত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূর্গাপুর সীমান্তে ডাঙ্গোয়াল সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, শুধু দূর্গাপুর সীমান্তে নয়, লালমনরিহাট জেলার প্রায় ২২টি সীমান্ত রুটে প্রতিরাতে শত শত ভারতীয় গরু সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসতেছে। এইসব ভারতীয় গরু পাচার করে নিয়ে আসার সময় কোন ফসলের ক্ষেত সেটা চিন্তা করা হয় না। তাদের চিন্তা শুধু কতো তারাতারি অল্প পথে গরু গুলো গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া যায়। লালমনরিহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালয়িনের দূর্গাপুর বাওপি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মশিউর রহমান বলেন, কৃষকরা তার কাছে অভিযোগ করেছেন। ক্যাম্পে আমাদের জনবল সঙ্কট থাকায় সব সময় সবদিকে টহল ব্যবস্থা জোরদার করা সম্ভব হচ্ছে না। ডাঙ্গোয়ালরা খুবই দু:সাহসি ও চালাক-চতুর প্রকৃতির। বিজিবির নজরদারি ফাঁকি দিয়ে তারা ভারতীয গরু অবৈধ পথে পাচার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ‘কৃষকদের ফসলের ক্ষেত যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য চিহ্নিত রুট গুলোতে টহল ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি।