শহীদ বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়ার সমাধিতে পুস্ফস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সরাইল প্রেসক্লাব। পরে কোরআন তেলাওয়াত করে বকুল মিয়া সহ সকল শহীদদের জন্য দোয়া করা হয়েছে। গতকাল ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় সরাইল সদরের আলীনগরে উনার সমাধিস্থলে এক ঘন্টা অবস্থান করেছেন প্রেসক্লাবের সদস্যরা। গত ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সর্ব প্রথম এই কাজটি করে আসছেন ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকদের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সরাইল প্রেসক্লাব। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও এ দিবসে বকুল মিয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরব স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যখন কেউ এই শহীদ বুদ্ধিজীবীর খবর নিচ্ছিল না। তখন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মত ওই বুদ্ধিজীবীর কবরে ছুটে আসেন সরাইল প্রেসক্লাব। কবরটি খুঁজে বের করে পরিচ্ছন্ন করেন। পরে কবরে সংগঠনের সকলে পুস্ফস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়। সেখানে দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াতের পর তারা দোয়া করেন। উভয় কাজে উপস্থিত ছিলেন সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আবদাল হোসেন, সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ কামরূজ্জামান ইউসুফ ও সমাজকর্মী সৈয়দ নাদির হোসেন। শহিদের স্ত্রী নুরূল আক্তার (৭৩) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, পাঞ্জাবীরা বাড়ি থেকে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করল আমার স্বামী আকবর হোসেন ও দেবর আফজাল হোসেনকে। ৫২টি বছর গেল। ফুল তো দুরের কথা। মানুষটির কবরে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে কেউ আসেননি। কবরটি সংস্কার বা সৌন্দর্য বর্ধনেও কারো কোন উদ্যোগ নেই। আমরা কিছুই চাইনি। চেয়েছিলাম শুধু সম্মান। তাও তো ভাগ্যে জুটেনি। ৫০ বছর পর গত ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর সরাইল প্রেসক্লাবের লোকজন কবরটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেছেন। ফুল দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করছেন। খুশি ও আনন্দে বুকটা ভরে গেছে। সরাইল প্রেসক্লাবও বকুল মিয়ার মত আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিল। কারণ শহিদ বুদ্ধিজীবী বকুল মিয়ার সমাধিতে প্রেসক্লাবই প্রথম শ্রদ্ধা জানালো। এর আগে কেউ এ কাজটি করেননি। প্রেসক্লাবের কাছে বকুল মিয়ার পরিবার ঋণী হয়ে গেল। প্রসঙ্গত: ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর সকাল বেলা। কোরআন তেলাওয়াত করছেন বকুল মিয়া। হাজির পাকবাহিনী। স্ত্রী স্বজনদের সামনে চোখ বেঁধে নিয়ে যান তাকে। পরের দিন ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনকে আটক করেন। দুজনই নিখোঁজ। ৪ দিন পর কুরূলিয়ার খাল পাড়ে মিলে দুই ভাইয়ের লাশ। বড়ই নির্মম! তাদের বুক পেট বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝড়া। অনেক অনুরোধের পর মন গলে বর্বরদের। ১০ ডিসেম্বর তাদের লাশ এনে দাফন করা হয়। আজ পর্যন্ত ওই বুদ্ধিজীবীর কবরে কারো শ্রদ্ধা নেই। নেই কোন সংস্কার।