বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে শেষ কবে স্বাক্ষর করেছিলেন, আন্দ্রে রাসেল নিজেও হয়তো মনে করতে পারবেন না। জাতীয় দলে নিয়মিত খেলেছেন ক্যারিয়ারে খুব কম সময়ই। এবারই যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন তিনি দুই বছরের বিরতির পর। তিনিসহ ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের আরও অনেক তারকাকে নিয়েই ধারণা করা হয়, জাতীয় দলের চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটই তাদেরকে বেশি আকর্ষণ করে। তবে এমন অভিযোগ মানতেই রাজি নন রাসেল। তার দাবি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে খেলতে চান তিনি সবসময়ই। দুই বছর পর ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয় এনে দিয়েছেন রাসেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ১৪ বলে ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। এই ম্যাচের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তাকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এরপর কখনও চোট, কখনও বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, কখনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ব্যস্ততা, সব মিলিয়ে জাতীয় দলে দেখা যায়নি তাকে। তার পুরো ক্যারিয়ারের গল্পটাই এমন। ২০১০ সালে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে। সেই অভিষেক টেস্টই তার ১৩ বছরের ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট। ২০১১ সালে সীমিত ওভারে অভিষেকের পর এই এক যুগে ওয়ানডে খেলেছেন তিনি স্রেফ ৫৬টি। যে সংস্করণে তিনি বিশ্বজুড়ে খেলে বেড়ান, এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে খেলেছেন ৪৬২ টি-টোয়েন্টি, সেই সংস্করণেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন কেবল ৬৮ ম্যাচ। দারুণ সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার হিসেবেই তার শুরু হয়েছিল। পারফরম্যান্সের কারণে দলের বাইরে থেকেছেন কম সময়ই। কিন্তু ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, সুনিল নারাইন, কাইরন পোলার্ডদের পথে হেঁটে রাসেলও বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন বেশির ভাগ সময়ই। চোট সমস্যা তো কিছু সময় ছিলই, তার চেয়েও বেশি ছিল বোর্ডের সঙ্গে টানাপোড়েন ও বিভিন্ন লিগে ব্যস্ততা। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের পয়সার ঝনঝনানি রাসেলদেরকে বেশি টানে, এরকম একটি ধারণা তাদেরকে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বজুড়েই আছে। তবে আরও একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ফিরে ৩৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার নিজে থেকেই টেনে আনলেন সেই প্রসঙ্গ। “(ফেরার পর) যে শুরুটা পেলাম, তাতে খুব ভালো লাগছে। সবসময়ই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চাই আমি। যদিও লোকে মাঝেমধ্যে মনে করে, শুধু লিগগুলো ও এসব নিয়েই থাকতে চাইৃ তবে আমার ব্যাপারটি হলো, আমি চাই নিজের শরীরের দেখভাল ঠিকঠাক করতে এবং যখন ডাক আসে (জাতীয় দল থেকে), তখন যেন প্রস্তুত থাকি। এবার ডাক পাওয়া ঘিরে আমি খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম।” রাসেলের এবারের ফেরার পেছনে বড় ভূমিকা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাদা বলের ক্রিকেটের কোচ ড্যারেন স্যামির। দুজন দীর্ঘদিন ছিলেন সতীর্থ। ২০১২ ও২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলে একসঙ্গে খেলেছেন দুজন। তাদের বন্ধুত্বও অনেক দিনের। কয়েক মাস আগে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) রাসেলের ভালো পারফরম্যান্সের পরই তাকে ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছিলেন স্যামি। “স্যামি উল্লেখ করেছিলেন যে, সিপিএলে আমার যা করা দরকর, তা করতে পারলে সে অবশ্যই দল নির্বাচনে আমার নাম তুলে আনবে। আমি অপেক্ষা করছিলাম আশা নিয়েৃ এরপর তো এই যে, এখন খেলছি এবং বুকে এই ক্রেস্ট (ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় প্রতীক) নিয়ে খেলতে পেরে আমি খুশি।” আগামী জুনে দেশের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকিয়েই মূলত ফেরানো হয়েছে রাসেলকে। তিনি নিজেও চোখ রাখছেন বিশ্বকাপেই। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর লক্ষ্য তার। তবে শেষ নয় সেখানেই। বিশ্বকাপের পরও যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল তাকে কখনও চায়, তিনি সানন্দেই অবস ভেঙে ফিরবেন বলে জানিয়ে রাখলেন। “বিশ্বকাপটা আমার কেমন যায়, এর ওপর এটি (অবসর) নির্ভর করছে। এখনও অনেক কিছুই দেওয়ার আছে আমার। তবে কোচের সঙ্গে আমার যে আলোচনা হয়েছে, আমি বলেছি যে বিশ্বকাপ শেষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে যাব। তবে এরপরও যদি তাদের প্রয়োজন পড়ে আমাকে, তাহলে অবসর থেকে ফিরে আসব।” “এই পরিকল্পনাই আমার আছে আপাতত। এত এত তরুণ প্রতিভা এখন আছে আমাদের, আমার মতোই অনেকে আছে। কখনও কখনও এই উপলব্ধি প্রয়োজন যে সামনেই বয়স হয়ে যাবে ৩৬। তরুণদের তাই সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তবে এরপরও যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে আমাকে, তাদের হয়ে ঘাম ঝরাতে আমি প্রস্তুত থাকব।”