সারা বছরই দেশে কম-বেশি ফুলের চাহিদা থাকে। শীতকাল ফুলের ভরা মৌসুম হওয়ায় এবং ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়। তাই এবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুল বিক্রি করে অর্ধ কোটি টাকা লাভের আশা করছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলচাষিরা। চলতি বছর ফুল চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলায়। ফুল চাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে নিজেদের ভাগ্যও পরিবর্তন করেছেন এলাকার অনেক কৃষক। বর্তমানে উপজেলার তিন শতাধিক কৃষক তাদের জমিতে কৃষিকাজের পরিবর্তে ফুল চাষ করছেন। এখানকার উৎপাদিত গাঁদা ফুলের ওপর রাজধানী ঢাকাসহ চট্রগ্রাম ও সিলেটের ফুল ব্যবসায়ীদের নির্ভর করতে হয়। এমনকি সারা দেশেও এখান থেকে ফুল সরবরাহ করা হয়। তাই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এখানকার ফুলের চাহিদা। ফুলচাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ফুল চাষ করতে তাদের খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর উৎপাদনের পর সেই ফুল ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে লাভই থাকে লাখ টাকার মতো। তাই এখানকার কৃষকরা কৃষি কাজের পরিবর্তে দিন দিন ফুল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। মৌসুমের পরেও ফুল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে এটি চাষের মাধ্যমে তারা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে, ফুল চাষ সম্পর্কে তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন। তাই কৃষকরাও সঠিক ভাবে ফুল চাষ করে প্রতিনিয়ত লাভবান হচ্ছেন। মহান বিজয় দিবস আগামী শনিবার। বাঙালি জাতির গর্বের দিন। দীর্ঘ নির্যাতন-বঞ্চনা থেকে মুক্তির দিন। দিবসটি উপলক্ষে জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে দেশবাসী। দিবসটিকে ঘিরে বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা। তাই বিজয় দিবসের ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কালীগঞ্জের ফুল চাষিরা। চলছে ফুল চাষিদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিবসটি উপলক্ষে ফুল বিক্রি করে সারা বছরের লাভ লোকসানের হিসাব কষবেন চাষিরা। বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না বাজারে ফুল বিপণন কেন্দ্রে হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুল ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও ফুল চাষিরা। গাড়িতে করে ফুল আনতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা দরে। আর গ্রামে গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রঙের ফুল ও ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। রঙ-বেরঙের ফুলে মাঠ গুলো সেজেছে নতুন সাজে। ফুলের কড়ি ধরে রাখতে এবং ভালো ফলন পেতে বাগানগুলোতে চলছে পরিচর্যার কাজ। গ্রামের নারীরা গাঁদা ফুল তুলতে ব্যস্ত। কমলা-হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকার চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। মহান বিজয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে ঝিনাইদহের ফুল। দাম ভালো পেলে গত বছরের মতো এবারও চাষিরা লাভের মুখ দেখবেন। গাঁদা ফুলের ঝুপা কয়েক দিন আগেও ছিল ৫০-৬০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়বে। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ভালো বাজার পাবেন বলে আশা করছেন। কিছু বিশেষ দিনে ফুলের বাজার বাড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ কম হবে। গত বছর যেখানে গাঁদা ফুল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ঝুপা বিক্রি করেছেন, সেখানে বর্তমান বাজার চলছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ঝুপা। ফুল ব্যবসায়ি ও চাষিরা বলছেন অবরোধের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় সঠিক সময়ে ফুলগুলো বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তারপরও কিছুটা লাভ হবে বলে মনে করেন তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রমারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজগর আলী বলেন, বিভিন্ন ফসলের পাশাপশি এখানে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে সবথেকে বেশি গাাঁদা ফুল চাষ হয়ে থাকে কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহে। কৃষদের ফুল বিক্রয়ের জন্য সরকারি ভাবে জেলাতে বিশেষ বিশেষ স্থানে ফুল বিপণন কেন্দ্র তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রয় করে থাকে।