ঘরের ছেলের সেঞ্চুরির অপেক্ষায় তখন পার্থ স্টেডিয়ামের দর্শকেরা। কিন্তু লাঞ্চের পর প্রথম বলেই আশার সমাধি। খুররাম শাহজাদের দারুণ ডেলিভারিতে ৯০ রানে বোল্ড মিচেল মার্শ। দারুণ বোলিংয়ে এরপর অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের বাকিটা ছেঁটে দিলেন আমের জামাল। অভিষেকেই এই পেসার পেলেন ৬ উইকেটের স্বাদ। বোলিংয়ের শেষটা ভালো করার পর ব্যাটিংয়ের শুরুতেও বেশ লড়াই উপহার দিল পাকিস্তান। পার্থে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। শেষ ৫ উইকেট ৭৬ রানের মধ্যে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করে দিয়েছে তারা ৪৮৭ রানে। এরপর নিজেরা ব্যাটিংয়ে নেমে দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ১৩২ রানে। প্রথম দিন ৫ উইকেটে সাড়ে তিনশর দুয়ারে থাকা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় দিন যোগ করেছে আর ১৪১ রান। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও আক্ষেপে পুড়েছেন মার্শ। অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচশর আগে থামিয়ে রাখার কারিগর অভিষিক্ত পেস বোলিং অলরাউন্ডার জামাল। তার আগে টেস্ট অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি ছিল পাকিস্তানের আর কেবল একজন বোলারের। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে মেলবোর্নে ৮৯ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন আরিফ বাট। ৫৯ বছর পুরোনো কীর্তি ছুঁয়ে দলকে লড়াইয়ের পথ খুলে দেন ২৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। পরে একপ্রান্ত আগলে রেখে দিন শেষ করেন ইমাম। লম্বা সময় উইকেটে থেকে বিদায় নেন আরেক ওপেনার শাফিক। প্রথম দিন অনেকটা সাদামাটা বোলিং করা জামাল দ্বিতীয় দিন দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান। প্রথম ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার আগের ওভারে দারুণ ডেলিভারিতে তিনি বোল্ড করেন অ্যালেক্স কেয়ারিকে। রাউন্ড দা উইকেট থেকে অফ স্টাম্প লাইনে পিচ করে হালকা বেরিয়ে যাওয়া বলের জবাব দিতে পারেননি কিপার-ব্যাটসম্যান। ৩৪ রান করা কেয়ারির বিদায়ে ভাঙে মার্শের সঙ্গে তার ৯০ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। কয়েক ওভার পর মিচেল স্টার্ককেও প্রায় একই ধরনের ডেলিভারিতে বোল্ড করেন জামাল। সেঞ্চুরির দুয়ারে দাঁড়িয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান মার্শ। বিরতির পর প্রথম বলে শাহজাদের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ খেলার চেষ্টায় ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন তিনি। ১০৭ বলের ইনিংসে ১৫ চারের সঙ্গে ছিল ১টি ছক্কা। এরপর আবার দৃশ্যপটে জামাল। বাড়তি বাউন্সে স্লিপে ধরা পড়েন প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন জামাল। এরপর ন্যাথান লায়নকেও আউট করে অস্ট্রেলিয়ান ইনিংস থামিয়ে নিজে ধরেন ষষ্ঠ শিকার। ৩৮ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের পেসারদের মধ্যে অভিষেকে সবশেষ ৫ উইকেট নিতে পেরেছিলেন তানভির আহমেদ। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবু ধাবিতে ১২০ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রায় ১৩ বছর পর এবার জামাল খরচ করেছেন ১১১ রান। দিনের প্রায় দুই সেশন বাকি থাকতে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার পেস ত্রয়ীর চ্যালেঞ্জ সামলে সাবধানী ব্যাটিংয়ে চা-বিরতি পর্যন্ত ২০ ওভারে ৪৩ রান করেন দুই ওপেনার শাফিক ও ইমাম। ২৬তম ওভারে পূর্ণ হয় পাকিস্তানের পঞ্চাশ রান। জমাট এই জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারেন লায়ন। ৩৭তম ওভারে তার লেগ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে লেগ স্লিপে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন শাফিক। ১২১ বলে ৩৮ রান করা ওপেনারের বিদায়ে ভাঙে ৭৪ রানের জুটি। তিনে নেমে শান মাসুদ বেশ ইতিবাচক ভঙ্গিতে শুরু করেন। দ্রুতই চারটি বাউন্ডারি মারেন তিনি দারুণ শটে। দিনের শেষ দিকে তাকে ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি ড্রাইভের চেষ্টায় ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে পাকিস্তান অধিনায়কের বিদায়ঘণ্টা বাজায় অস্ট্রেলিয়া। নাইটওয়াচম্যান শাহজাদকে নিয়ে দিনের বাকি কয়েক ওভার কাটিয়ে দেন ইমাম। ১৩৬ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত এই বাঁহাতি ওপেনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে):
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩৪৬/৫) ১১৩.২ ওভারে ৪৮৭ (মার্শ ৯০, কেয়ারি ৩৪, স্টার্ক ১২, কামিন্স ৯, লায়ন ৫, হেইজেলউড ৪*; আফ্রিদি ২৭-৭-৯৬-১, শাহজাদ ২২-৫-৮৩-২, জামাল ২০.২-১-১১১-৬, ফাহিম ১৭-১-৯৩-১, সালমান ২৭-৩-৮৬-০)
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৩ ওভারে ১৩২/২ (শফিক ৪২, ইমাম ৩৮*, মাসুদ ৩০, শাহজাদ ৭*; স্টার্ক ১২-২-২৪-১, হেইজেলউড ১৩-৩-২৮-০, কামিন্স ১০-৪-১২-০, লায়ন ১৩-২-৪০-১, মার্শ ৪-০-১২-০, হেড ১-০-৩-০)