ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের অন্যতম লাভজনক চাষ ফুল যেন এখন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। বিজয় দিবসে ফুল চাষিদের লক্ষমাত্রা ছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে, কিন্তু বাস্তবে তা ভেস্তে গেছে। ফুল চাষিরা বলছেন দফায়-দফায় হরতাল অবরোধে ফুল চাষিরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশব্যাপী একদিকে ফুলের চাহিদা যেমন কমেছে অন্যদিকে পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হওয়ায় পুরোপুরি লোকসানের মুখে ফুল চাষ। হরতাল আর অবরোধকেই একমাত্র কারণ হিসেবে দুষছেন কৃষকসহ ব্যবসায়ীরা। কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ এলঅকায় গত ৫ দিনে ফুল বিক্রি হয়েছে ২০ কোটি টাকার। কৃষক নজরুল জোয়ারদার। তিনি এবার ৩০ শতক জমিতে ২০ হাজার টাকা লগ্নি করে গাঁদা ফুল লাগিয়েছিলেন। আশা ছিল লাভের মুখ দেখবেন। দফায়-দফায় হরতাল-অবরোধে লাভ তো দূরে থাক চরম লোকসানে তিনি দিশাহারা। ফুল পচনশীল হওয়ায় আর পরবর্তী ফলন বাঁচাতে তিনি ও তার ছেলে ফুল তুলে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তার চোখে মুখে শুধু অন্ধকার। প্রান্তিক এই কৃষকের দাবি ফলন ভালো হয়েছিল কিন্তু দেশের রাজনীতি তাকে পঙ্গু করে দিল।সারা দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি গাঁদা ফুল উৎপাদনকারী কালীগঞ্জ উপজেলা ও ঝিনাইদহে। এই এলাকার ফুল ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট বিভাগের সব জেলায় গাঁদা ফুল সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
গাঁদা ফুলের হাটের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতায় এক গাড়ি ফুল যেখানে ঢাকায় যেতে টাকা খরচ হতো ১৮-২০ হাজার টাকা। সেখানে বর্তমানে খরচ ফুল ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে ৩০-৩২ হাজার টাকা। তারপরও গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, অবরোধের আগেও গাদা ফুল প্রতি ঝোপা (১০ চোইন) বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দরে। অথচ এখন সেই ফুলের ঝোপা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। রীতিমত ধস নেমেছে ফুল ব্যবসায়। এতে চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে ফুল চাষিদের। প্রতি বছর কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ থেকে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়, কিন্তু এবার তা হবে বলে এমন টা আশা করছে ফুল চাষি ও ব্যবসায়িরা।
পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী সোহাগ হোসেন জানান, শুধু কৃষকই না অবরোধের কারণে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে ফুল ব্যবসায়ীরাও। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বাহনে ফুল পাঠাতে খরচ হচ্ছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। অবশ্য তিনি যোগ করেন, ১৬ ডিসেম্বর ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের লগ্ন চলায় কিছুটা ব্যবসা বেড়েছে। এতে করে আশপাশের জেলায় ফুল যাচ্ছে। তবে চাহিদার বিপরীতে আমাদের যোগান খুব ভালো ছিল।
কৃষকেরা বলছেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের দীর্ঘদিন পর লগ্নে বিবাহ বেড়েছে, এ ছাড়া বিজয় দিবস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমেজ শুরু হয়েছে। যার কারণে হঠাৎ করেই ফুলের দামবেড়েছে। নভেম্বরের শেষ দিকে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই বেশির ভাগ ফুল নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে উৎপাদনও কমে যায়।
কালগিঞ্জ বালিয়াঙ্গা গ্রামের ফুল ব্যবসায়ি আবদুল মমিন বলেন গত ৫দিনে ফুল বেশি বিক্রি হয়েছে কিন্তু দাম টা ভাল না।।অবরোধের কারণে গাঁদা ফুল প্রতি ঝোপা (১০ চোইন) বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। রীতিমতো ধস নেমেছিল ফুল ব্যবসায়। বিজয় দিবসকে ঘিরে ৬ দিনে পুরো ফুল বাজার সেটা পুশিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ৬ দিনে এক বিঘা জমি থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি নিজেই। এখনো ক্ষেতে ফুল রয়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী, জানান, জেলায় ২৫৪ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের আগে গান্না ফুল বাজারে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হতো। বর্তমানে প্রতিদিন ফুল বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ২ লাখ টাকার। হরতালের কারণে ফুল চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।