ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খোর্দ্দরায় গ্রামের নুর ইসলামের স্ত্রী রহিমা বেগমের দাঁতে প্রচন্ড যন্ত্রনা নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় কালীগঞ্জ শহরের ছন্দা সিনেমা হল সুপার মার্কেটের ভেতরে ফিরোজ ডেন্টালে আসেন চিকিৎসা নিতে। চেম্বারে প্রবেশের পর ডাক্তার সেজে বসে থাকা নুসরাত নামের এক নারী প্রথমে তার দাঁতের পরিক্ষা নিরীক্ষা করেন। পাশে আরেক ভুয়া চিকিৎসক জামাল হোসেন চিকিৎসা কাজে তাকে সহযোগিতা করছিলেন। প্রথমে রহিমা বেগমের মুখে উপরের অংশের মাড়ির যন্ত্রনাকৃত দাঁতটি উঠিয়ে ফেলার জন্য নুসরাত অবশের ইনজেকশন দেন। নুসরাত সমস্যা জনিত দাঁতটি না তুলে পাশে থাকা ভালো দাঁতটি তুলে ফেলেন। এ সময় নুসরাতের সহযোগী জামাল হোসেন কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যান। বাইরে থেকে ফিরে দেখেন রোগীর যন্ত্রনাকৃত দাঁতের পাশে থাকা ভালো দাঁতটি ভুল করে তুলে ফেলেছেন নুসরাত। জামাল হোসেন পূনরায় রোগীর যন্ত্রনাকৃত দাঁতটি তুলে ফেলেন। পাশাপাশি দুইটি দাঁত একই সাথে তোলার কারণে রোগী যন্ত্রনায় ছটফট করেন এবং মাথা ঘুরে পড়ে যান ডাক্তারের রুমের মধ্যে। ভুল চিকিৎসা করা হয়েছে বুঝতে পেরে চেম্বারে থাকা ডাঃ ফিরোজুর রহমান (সনদবিহীন ভূয়া ডাক্তার) ডা: মোঃ সুমন হুসাইনের নামের প্যাডে চারটি ওষুধ লেখে তাতে সাক্ষর করে ব্যবস্থাপত্র রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত চেম্বার ত্যাগ করেন নুসরাত। ভুল চিকিৎসায় দাঁত হারনো রহিমা বেগমের স্বজনরা এঘটনার প্রতিবাদ করলে চেম্বারে থাকা জামাল হোসেন ভুল শিকার করে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে জামাল হোসেন দ্রুত চেম্বার বন্ধ করে চলে যান। ব্যবস্থাপত্রে থাকা ডাক্তারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও এ ব্যাপারে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ফিরোজ ডেন্টালের ফিরোজুর রহমান দন্ত চিকিৎসক না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে তিনি এবং তার চেম্বারে থাকা জামাল হোসেনকে দিয়ে দাঁতের রমরমা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চেম্বারে তিনি দাঁতের কাজ শেখানোর নামে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোক রাখেন। তারাও দু-একদিন দেখার পর ডাক্তার বনে যান। ঠিক তেমনি নুসরাত নামের ওই নারী একজন দন্ত চিকিৎসক না হয়েও দাঁতের চিকিৎসা করেন নিয়মিত। নুসরাত সম্পর্কে ফিরোজুর রহমানের ছেলের বউ। প্রতিনিয়ত এভাবে ডাক্তার সেজে সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারনা করে চলেছে ফিরোজ ডেন্টাল সনদবিহীন ভুয়া ডাক্তার। ফিরোজ ডেন্টালের স্বত্বাধিকারী একজন বিডিএস ডাক্তার মাঝে মধ্যে চেম্বারে এনে চিকিৎসা দেন। বাকি সময় ভুয়া চিকিৎসকনায় দাঁতের চিকিৎসা করে থাকেন। আর ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ডাক্তার লিখে ব্যবস্থাপত্র তৈরি করে তাতে আবার এন্টিবায়োপিক ওষুধও লেখেন রোগীর জন্য। রহিমা বেগমের স্বামী নুর ইসরাম জানান, যে দাঁতে সমস্যা সেই দাঁত না তুললে ভালো দাঁত কিভাবে তোলে? আগে থেকে বুঝতে পারিনি যে তারা দাঁতের ডাক্তার না। আমার স্ত্রী বারবার নিষেধ করার পরও ওই মহিলা আমার স্ত্রীর ভালো দাঁতটি তুলে ফেলল। পরক্ষণে আরেকজন যন্ত্রণাকৃত দাঁতটি তুলল। এইসব লোক ডাক্তার সেজে কেন মানুষের ক্ষতি করে। আমার স্ত্রীর যে ক্ষতি হলো তা কি আর পূরণ হবে? একদিনও এইসব ভুয়া দন্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ দেওয়া উচত নয়। কালীগঞ্জ উপজেলা সাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ফিরোজ ডেন্টালে কারা কিভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন তা খোঁজখবর নেওয়া হবে। ডাক্তার হিসেবে যারা রয়েছেন তাদের সনদ যাচাই করা হবে। কালীগঞ্জ উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ভুক্তভোগী কর্তৃক লিখিত অভিযোগ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।