গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের ইকুরিয়া গ্রামে গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ৩ দিনেই প্রায় ৭০ শতাংশ সড়কের পলেস্তারা উঠে গেছে। সংশ্লিষ্টরা সড়কটি সংস্কার নিয়ে করছেন তালবাহানা। রোববার সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার তরগাঁও-ইকুরিয়া সড়কের ইকুরিয়া বাজার থেকে কবিরের বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কটি বিস্তৃত। ইকুরিয়া থেকে পিচঢালা ওই সড়ক ধরে ২০০ মিটার যেতেই পলেস্তারা বিহীন সড়কের দেখা মিলে। এরপর পুরো সড়ক জুড়ে অন্তত ২০ টি স্থানে পলেস্তারা উঠে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় পলেস্তারা উঠে যাওয়ার পাশাপাশি গর্ত ও সড়ক ভেঙে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ইকুরিয়া থেকে কবিরের বাজার পর্যন্ত ১৮৫০ মিটার সড়কটি সংস্কার কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এই বরাদ্দ দেয়। কার্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কারকাজ পায় ‘মেসার্স হামিদ বিল্ডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু হয়। গ্রামীণ সড়ক শ্রেণীর ওই সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১৮৫০ মিটার। আর প্রস্থ্য ৮ ফুট। কার্যাদেশে সড়কের পিচের পুরুত্ব ধরা হয় ২৫ মিলিমিটার। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংস্কার কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে জানা গেছে, সংস্কার কাজের মেয়াদ বিভিন্ন কারণে দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর তারিখে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো। এরপর ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। রাস্তায় চলাচলে আপাতত কোনো সমস্যা হচ্ছে না উল্লেখ করে রাস্তাটি নির্মাণের সার্বিক দায়িত্বে থাকা (এস এ ই) কাপাসিয়া উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন জানান, সংস্কার কাজে সমস্যা হওয়ায় আবারো সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয় লোকজন এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান খান বলেন, পিচ ঢেলে যাওয়ার ৩-৪ দিনের মধ্যেই সেগুলো উঠে যেতে থাকে। ১৫ দিন পর প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ সড়কের পিচ উঠে যায়। এতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের মুখে পলেস্তারা গুলো তুলে নিয়ে যায় ঠিকাদারের লোকজন। এরপর ৭ মাস ধরে ঠিকাদারের খোঁজ নেই। মোঃ স্বপন নামের স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক বলেন, আগের ভাঙ্গা রাস্তার পিচের তুলনায় নতুন সংস্কার করার সময় দেওয়া পিচের পুরুত্ব খুবই কম। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো জায়গায় পিচের পুরুত্ব আধা ইঞ্চিও দেওয়া হয়নি। ঠিকাদার টাকা বাঁচাতে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। আমরা এলাকাবাসী এখন এর মাশুল দিচ্ছি।’ একই গ্রামের মোঃ সামাদ মিয়া বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে ঠিকাদার কোনমতে কাজ করে চলে গেছে। এই সড়কটি নির্মাণের সময় এলজিইডি’র কর্মকর্তাগণ যদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন তাহলে হয়তো ঠিকাদার এরকম করে সড়ক নির্মাণ করে যেতে পারত না। এখন সাত মাস ধরে কারোরই দেখা নেই। যানবাহন চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। সড়কের কিছু ভাঙ্গা অংশ স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে সংস্কার করে কাজ চালাচ্ছেন।’ কবিরের বাজার এলাকার মোঃ শামসুদ্দীন বলেন, কাজ করার সময় ঠিকাদারের লোকজন বিটুমিনের পরিমাণ কম দেওয়ায় ও অনিয়ম করে বেশিরভাগ জায়গায় আধা ইঞ্চির চেয়েও কম পুরুত্ব দেওয়ায় তা উঠে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হামিদ বিল্ডার্সে’র স্বত্বাধিকারী আবদুল হামিদ মুঠোফোনে বলেন, ‘তারা কি বলছে না বলছে, এতে আমার কিছু আসে যায় না। এলজিইডি দেখেছে। যেভাবে কাজ ধরা ছিল সেই অনুযায়ী কাজ করেছি। আবদুল হামিদ আরো বলেন, ‘গ্রামীণ সড়কগুলোর ১০ টন লোড ক্যাপাসিটি দেওয়া হয়। এই লোড যথেষ্ট নয়। ওই সড়কগুলোর জন্য মাত্র ২৫ মিলি পুরুত্ব যথেষ্ট নয়। আমরা মিটিংয়ে বারবার বলেছি এটি যেন আরো বাড়ানো হয়। কিন্তু তা বাড়ানো হচ্ছে না।’ এ প্রসঙ্গে কাপাসিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘হামিদ বিল্ডার্সের কাজটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তাই আমরা এটি গ্রহণ করিনি। তাদেরকে পুনরায় সঠিকভাবে কাজ করে বুঝিয়ে দিতে বলেছি। ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত তারা সময় চেয়ে আবেদন করেছে।’ মোঃ মাঈন উদ্দিন আরো বলেন, ‘উপজেলার অন্যান্য গ্রামীণ সড়ক গুলো ২৫ মিলিমিটারেই ভালো চলছে। অথচ ওঁর সড়কে সমস্যা হয়ে গেল। এটাতে ত্রুটি থাকার কারণেই এমন হয়েছে।’