খুলনার পাইকগাছায় লবণাক্ত মাটিতে সরিষা ফুলের হলুদের আভা ছড়াছে। সরিষার ক্ষেত হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। উপজেলার আয়তন ৩৮৩.১৫ বর্গ কিলোমিটার। যার অধিকাংশ ভূমি লবণাক্ত। চলতি মৌসুমে ৩২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর ২৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়। আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি আর ঘণ কুয়াশা কম থাকায় এখন পর্যন্ত সরিষার জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। লবণাক্ত মাঠে মাঠে সরিষা হলুদ ফুলের ম-ম গন্ধ পথিককে বিভোর করছে। পৌষের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষা ফুল। শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘণ কুয়াশার চাঁদরে মোড়ানো মাঠ জুড়ে কেবল চোখে পড়েছে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। পৌষের শীতের এই শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলগুলো সোনা ঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য। যেন প্রকৃতি কন্যা সেজেছে হলুদ বরণ সাজে। উপজেলার অধিকাংশ ফসলের মাঠ লবণাক্ত। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভার মধ্যে সরিষা চাষ হয় হরিঢালী, গদাইপুর, কপিলমুনি, গড়-ইখালী, চাঁদখালী ইউনিয়নে। তবে পৌরসভাসহ অন্য ৫ ইউনিয়নে লোনা পানির চিংড়ি চাষ বেশী হয়। চারপাশে শুধু সরিষা ফুলের ম-ম গন্ধে বিভোর ফসলের মাঠ। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনই প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। কখনো সবুজ, কখনো সোনালী, কখনো বা হলুদ। এমনই ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়ছে এ ফসলের মাঠ। সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে। বর্তমানে সরিষা একটি লাভজনক ফসলে পরিণত হওয়ায় ধীরে ধীরে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে গুঞ্জন করছে। চলছে মধু আহরণ। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ ভাসছে বাতাসে। সরিষার মাঠ দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাঁদর বিছিয়ে রেখেছে। হেমন্তকালের মাঠে মাঠে সবুজের অপার সমারোহ এখন আর নেই। উপকূলীয় উর্বর জমিতে এ বছর আশানারূপ সরিষা উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশা করছে। ক্ষেতের পর ক্ষেতে তরতাজা সবুজ সরিষা গাছে হলুদ ফুলে ভরে উঠায় কৃষককের মুখে হাঁসি ফুটেছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩২০হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে কৃষকদের সরিষার বীজ ও সার দেওয়ায় এবছর সরিষার আবাদ বেড়েছে। তবে সময় মত মাটিতে জো না আসায় সরিষার আবাদ কিছুটা দেরি হয়েছে। উপকূলের লবণাক্ত এলাকা চাষাবাদ অনেকটা প্রকৃতি ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। অন্য এলাকায় আগাম মাটিতে জো আসলেও উপকূল এলাকার নিঁচু মাটিতে জো আসতে দেরি হয়। কৃষকরা বারি সরিষা ১৪, ১৮, বিনা-৯ ও স্থানিয় জাতের সরিষা আবাদ করেছে। দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ফুল ঝরে সরিষার দানা বাধতে শুরু করেছে। উপজেলার গোপালপুর গ্রামে সরিষা চাষী আনছার আলী, আবদুস সামাদ ও সলুয়ার শহিদ জানান, তাদের ক্ষেতের আবাদকৃত সরিষা ভালো হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ জানান, ধান কাটতে দেরি হওয়ায় সরিষা আবাদ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। কৃষকরা যদি আগাম জাতের ধান চাষ করে তাহলে ধান কাঁটার পর সময়মত সরিষা চাষে পুরা সময় পাবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের আগাম জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাছাড়া উপকূল এলাকার নিচু জমিতে জো আসে দেরিতে সে জন্য ফসল লাগাতেও দেরি হয়। এবছর উপজেলায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হলে সরিষার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।