যশোরের কেশবপুরে কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার নারীরা। শীত মৌসুমে শুরুতে বিভিন্ন এলাকার নারীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে বড়ি তৈরি করার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নারীদের পাশাপাশি শিশুরা একাজে সহযোগিতা করেন। বুধবার ২০ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে গ্রামের নারীরা বড়ি তৈরির কাজ করছেন। উপজেলার ১নং ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন, ২নং সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন, ৩নং মজিদপুর ইউনিয়ন, ৪নং বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন, ৫নং মঙ্গলকোট ইউনিয়ন, ৬নং সদর ইউনিয়ন, ৭নং পাঁজিয়া ইউনিয়ন, ৮নং সুফলাকাটি ইউনিয়ন, ৯নং গৌরিঘোনা ইউনিয়ন, ১০নং সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন, ১১নং হাসানপুর ইউনিয়ন সহ গ্রাম অঞ্চলের নারীরা বড়ি তৈরি করার পর তা শুকিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। কেশবপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রাামে কুমড়ো বড়ি তৈরির যেন উৎসব চলছে। বাড়ির আঙিনা ও আশপাশে মাচা করে সেখানে শুকানো হচ্ছে বড়ি। স্বাদে ও মান ভালো হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে এখানকার বড়ির চাহিদা। বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হওয়ায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বড়ি তৈরি করছেন নারীরা। মাষকলাই ভিজিয়ে সেই ডালের সঙ্গে পাকা চালকুমড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ সুস্বাদু বড়ি। শীতের সময় গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ নারী পালা করে বড়ি তৈরি করার কাজটি করে থাকেন। কুমড়ো বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক খাদ্য। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা। ‘কুমড়ো বড়ি’ যেভাবে তৈরি করেন গ্রামের নারীরা স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে কেশবপুর উপজেলার নারীরা এই বড়ি তৈরি করার জন্য বেশ কয়েক মাস আগে থেকে চাহিদামতো পাকা চালকুমড়ো সংগ্রহ শুরু করেন। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন হয়। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়া অন্য ডালেও তৈরি করা যায় এই বড়ি। মচমচে করে রোদে শুকাতে পারলে এই বড়ির ভালো স্বাদ পাওয়া যায়। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কম বেশি কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করেন তারা। শীতের সময় কুমড়ো বড়ির চাহিদা থাকে বেশিগ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন। বড়ি তৈরি করা পাতিবিলা গ্রামের হাজেরা বেগম জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিভাবে কুচি করে রাখতে হয়। এরপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। অন্যদিকে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হয়। এরপর বাটা ডালের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হয়। যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়, ততক্ষণ খুব ভালো করে হাত দিয়ে এ মিশ্রণ মিশাতে হয়। এরপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির ছোট ছোট আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হয়। এভাবে বড়ি তিন থেকে চার দিন রোদে শুকিয়ে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। কেশবপুর উপজেলার বগা গ্রামের ফাতেমা বেগম, ফতেপুর গ্রামের জেহরা বেগম, ব্রক্ষকাটি গ্রামের আমেনা খাতুন, রামচন্দ্রপুর গ্রামের হাজিরা বেগম সহ অনেকে এ প্রতিনিধি কে জানান, শীতের সময় মূলত বড়ি তৈরি করা হয়। এ বড়ি নিজেদের খাওয়াসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়। কেশবপুর বাজারে কুমড়ো বড়ির ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, এখানকার কুমড়ো বড়ি খুব সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলের বড়ি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বিশেষ করে ঢাকায় এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মামুদা আক্তার বলেন, শীত মৌসুমে গ্রামের নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।