উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ খুলনার রাজনৈতিক মাঠের সিংহ পুরুষ প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই ও খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা। গতকাল তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাঁর প্রতীক বরাদ্ধ হয়েছে চায়ের কেটলি। ভোটের লড়াইয়ে তাঁর ফিরে আসায় রীতিমত তাঁর পক্ষে নানা অদৃশ্য কারণে সাড়া জাগিয়েছে। চিন্তা বেড়ে গেছে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মূর্শেদী শিবিরে।
এলাকার ভোটাররা ইতোমধ্যে বলাবলি শুরু করেছেন, গত বছর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দারা। বাছাইতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতির প্রার্থিতা বাতিল ছিল মহল বিশেষের পর্দার আড়ালের গোপন যড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ে দারা ভোটের মাঠে ফেরায় জয় পেতে নতুন কলাকৌশল আঁকতে হচ্ছে মুর্শেদী সমর্থকদের। রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ আসন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে এই আসন থেকে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা। তিনি তাঁর কর্মী বান্ধব অবস্থান, নির্বাচনী এলাকায় নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তিনি ছিলেন তাঁর নির্বাচনী এলাকাসহ খুলনার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা। নেতা ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন খুলনা অঞ্চলের সিংহ পুরুষ। ২০১৮ সালে তিনি মারা গেলে আসনটিতে মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘নবাগত’ আবদুস সালাম মূর্শেদী। যিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়েছেন। জানা গেছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সুজার কিছু অনুসারী সালাম মূর্শেদীর সঙ্গে যোগ দেন। তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকায় দলের মধ্যে কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি হয়। তাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মী বান্ধব নেতাকর্মীর। এলাকায় নেতা কর্মীদের মাঝে এমপির পক্ষ বিপক্ষের লোক হিসেবে নানা বিভক্তি সৃষ্টি হয় দলের মধ্যে। এরই জের ধরে দলের সন্মেলন ও কাউন্সিল হয়নি দীর্ঘদিন যাবৎ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা আবেদন করেন। এ আসনে ১৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও আবদুস সালাম মূর্শেদীকে আওয়ামী লীগ বেছে নিয়েছে। যাচাই-বাছাই ও আপিল শেষে ১০ জন প্রতীক পেয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদন্দিতার মাঠে দারা ফিরে আসায় লড়াই হবে ১১ জনের মধ্যে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জানান, গত পাঁচ বছরে নানা কারণে সালাম মূর্শেদীর সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব বেড়েছে তৃণমূল অনেক নেতাকর্মীর। এতদিন তারা এ আসনে তাঁরা একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর সন্ধানে ছিলেন। দারা নিশ্চিতভাবে এসব নেতার সমর্থন পাবেন। প্রয়াত ভাই সুজার অনুসারীদের জনপ্রিয়তাও তাঁর পক্ষে থাকবে। এ ছাড়া আসনটিকে বিএনপি সমর্থিতদের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। এসব ভোটার ভোট দিতে না এলেও সাধারণ ভোটারগণ এলাকার নানা পারিপার্শিক কারণে আসবেন। এই ভোট নৌকার বিপক্ষে যাবে।
আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাবেক নেতা জানান, ভোটের মাঠে দারা দারুণ কৌশলী। ২০২২ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে শেখ হারুন ৫০৬ ও দারা পান ৪০৩ ভোট। নির্বাচনে শেখ হারুনের পক্ষে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতারা মাঠে সক্রিয় ছিলেন; বিপরীতে দারার জন্য তেমন কাউকে দেখা যায়নি। সংসদ নির্বাচনে এবার দারা বড় চমক দেখাতে পারেন বলে মনে করছেন ভোটাররা। জানতে চাইলে মোর্ত্তজা রশিদী দারা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের কপি নিয়ে বুধবার খুলনায় ফিরেছি। বৃহস্পতিবারে প্রতীক নিয়েছি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছি। আমি সব সময় খুলনার সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি। তারা যখন খুশি ডাকলেই আমাকে কাছে পায়। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।’
এ ব্যাপারে সালাম মূর্শেদীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীকে আমি ছোট করে দেখছি না। আমার বিশ্বাস, রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়ার মানুষ নৌকার বিপক্ষে যাবে না। গত পাঁচ বছরে এলাকায় যত উন্নয়ন হয়েছে, স্বাধীনতার পর এত উন্নয়ন হয়নি।’
উল্লেখ্য, খুলনা-৪ আসনে এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৩ জন। ৩টি উপজেলার ১৩৩টি কেন্দ্রের ৮০৫টি বুথে ভোটাররা ভোট দিবেন। আসনটির অন্যান্য প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির মোঃ ফরহাদ আহমেদ (লাঙ্গল), বিএনএমের এস এম আজমল হোসেন (নোঙর), এনপিপির মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (আম), স্বতন্ত্র এম ডি এহসানুল হক (সোফা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা (ডাব), স্বতন্ত্র জুয়েল রানা (ট্রাক), রেজভি আলম (ঈগল), ইসলামি ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দিন খান (মিনার) এবং তৃণমূল বিএনপির মোঃ হাবিবুর রহমান (সোনালি আঁশ)।