বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার চরমে উঠেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে অবনতি বেশি হচ্ছে। সামান্য সর্দিকাশিতেও মানুষ নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছে। অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন করা হয় না। এতে শরীরে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয় না, বরং তারা ওই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করে। পরে জরুরি প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলেও তাতে জীবাণু ধ্বংস হয় না। আরও রোগীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক রোগ নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখলেও এর অপব্যবহার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইতোমধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। জীবাণুরা ক্রমেই বেশি করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে এবং দেশে এ কারণে প্রতিবছর এক লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিকের সংকট দেখা দিতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বেড়েছে ৩২ শতাংশ। জানা যায়, দেশে অন্তত ২১ ধরনের সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। সরকার অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও কিছু ফার্মেসিতে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু ফার্মেসি অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার করছে। যদিও সরকার অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও কিছু ফার্মেসিতে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না, ফলে কিছু চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর, সেহেতু এর অপব্যবহার রোধ করতে হবে। মানুষকেও এর ব্যবহারে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জোরালো পদক্ষেপ না নেয়া গেলে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার আরও বাড়তে থাকবে এবং নিম্ন-আয়ের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ক্ষতি হবে জেনেও তারা বারবার একই ভুল করবে। চিকিৎসকদেরও সচেতন হতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি যেহেতু আইনত নিষিদ্ধ, তাই এই আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারজনিত বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং খোলা বাজার ও দোকানে এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে।