আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহের গড় সামান্য বেড়েছে। রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে প্রধান পাঁচ দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে এর প্রবাহ কমেছে; পাঁচ দেশ থেকে বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর এই পাঁচ মাসে গত বছরের তুলনায় সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকে গড়ে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ইতালি, মালয়েশিয়া ও ওমান থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে গড়ে ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে দশমিক ২৪ শতাংশ। যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে, ওইসব দেশ থেকে তা কমে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। শীর্ষ দেশগুলো থেকে কেন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমছে এর কারণ অনুসন্ধান করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ বিদ্যমান ডলার সংকট মোকাবিলায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো জরুরি। এটি কমে গেলে সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে। ফলে মন্দার ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও বেশি সময় লাগবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হুন্ডি বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দেশে সফরের কথা রয়েছে। তারা রেমিট্যান্স বাড়ানোর ব্যাপারে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। প্রবাসীদের ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে; যে কারণে ব্যাংকগুলো বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। গড়ে সরকারি ও ব্যাংক মিলে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমানো হচ্ছে। হুন্ডি নিরুৎসাহিত করতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দেশে প্রবাসী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই-নভেম্বরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশ ছিল সৌদি আরব। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬০ কোটি ২৮ লাখ ডলার। চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ১২৬ কোটি ০১ লাখ ডলার। দেশটি থেকে হঠাৎ কেন রেমিট্যান্স কমে গেল তা খতিয়ে দেখা দরকার। গত বছরের একই সময়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে এসেছে ১৫৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এর আগে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। এ কারণে কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করে রেমিট্যান্স কমার কিছু কারণ শনাক্ত করে। এসব সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হলে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার বাড়তে শুরু করে। এ উদাহরণ থেকে স্পষ্ট, রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ দেশগুলোতে কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল সফর করে হুন্ডি বন্ধ করার পদক্ষেপ নিলে এর সুফল মিলবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রবাসী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়া হলে আশা করা যায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়েও গুরুত্ব বাড়াতে হবে। সর্বপোরি হুন্ডি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।