রেলে একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তরা কখনো ট্রেনে আগুন দিচ্ছে, কখনো রেললাইন ও ব্রিজে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, কখনো রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলছে কিংবা রেললাইনই কেটে ফেলছে। কিছুদিন আগে নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে বিমানবন্দর স্টেশনে থামতেই নাশকতাকারী ব্যক্তিরা আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। চলন্ত ট্রেনে আগুন লাগার ফলে, চারজনের মৃত্যু ছাড়াও বেশ কয়েকজন আহত হন এবং ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায়। রেল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলে কমপক্ষে ৪০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। নাশকতা এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আনসার সদস্য মোতায়েনসহ রেলপথ এস্কর্ট ও রেকি করার উদ্যোগও নিয়েছে; কিন্তু তারপরও কমছে না নাশকতা। একের পর এক ঘটনা ঘটার পরও ট্রেনে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তদন্তের আগেই নাশকতাকারী ব্যক্তিদের স্বরূপ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বাক্যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাশকতার জন্য হরতাল-অবরোধ আহ্বানকারী বিরোধী দলকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকার নাশকতা করে হরতাল-অবরোধকারীদের ওপর দোষ চাপাঁচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে একে ওপরকে দায়ী করাই যথেষ্ট নয়, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করে প্রমাণ করতে হবে অভিযোগের সত্যতা। যাঁরা এই ধরনের জঘন্য কাজ করেছেন, তাঁদের ধিক্কার জানাই। পাশাপাশি আমরা আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান করবো, মূল দোষীদের খুঁজে বের করা হোক। অপরাধীরা যাতে কোনোভাবে পার না পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
যাঁরা ট্রেন-বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেন তাঁরা দেশ ও জনগণের শত্রু। কোনো পক্ষেরই উচিত না রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিংবা নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতে এ ধরনের অপরাধীদের আশকারা দেওয়া। সড়ক বা রেল কোনো যাত্রায়ই মানুষের জীবন এখন আর নিরাপদ নয়। যে করে হোক এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। নিরীহ মানুষ যেন সহিংসতা ও নাশকতার শিকার না হন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এটা নিশ্চিত করতে হবে। যেভাবেই হোক, নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানি ও নাজেহালের শিকার না হন, সেদিকেও লক্ষ রাখা প্রয়োজন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যর্থতাই মেনে নেওয়া যায় না। সেজন্যে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা প্রয়োজন।