বিশ্বকাপ ফাইনালের পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ সপ্তাহ। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই হারের ক্ষত এখনও দগদগে রোহিত শার্মার হৃদয়ে। জীবন ও ক্রিকেটের নিয়মেই যদিও নতুন চ্যালেঞ্জে নামতে হচ্ছে তাদেরকে। এখানে আছে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। তবে সেই সাফল্য ধরা দিলেও বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের যন্ত্রণার উপশম হবে কি না, নিশ্চিত নন রোহিত। ভারতীয় অধিনায়ক তাই অপেক্ষায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য। বিশ্বকাপের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে ভারতীয় দল। তবে রোহিত, ভিরাট কোহলি, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজের মতো ক্রিকেটাররা ছিলেন বিশ্রামে। তারা মাঠে ফিরছেন সেঞ্চুরিয়নে বক্সিং ডে টেস্ট দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা এখন ভারতের জন্য ‘ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার।’ সব দেশে সিরিজ জিততে পারলেও এখানে কখনও সেই স্বাদ পায়নি ভারতীয়রা। আগের ৮ বারের সফরে ২০১০-১১ সিরিজ তারা ড্র করতে পেরেছিল। বাকি ৭ বারই হেরেছে সিরিজ। সবশেষ ২০২০-২১ মৌসুমের সফরে মনে করা হচ্ছিল ভারতের জন্য সিরিজ জয়ের সেরা সুযোগ। কোহলির নেতৃত্বে দল প্রথম টেস্ট জিতে আশা উজ্জ্বল করেছিল আরও। কিন্তু পরের দুটিতে তারা হেরে যায়। এবার আরেকটি সুযোগ দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজে। সেই প্রস্তুতিও আছে রোহিতদের। তবে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের যন্ত্রণা যে এখনও পোড়াচ্ছে, টেস্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সেই যন্ত্রণার কথাও বললেন অধিনায়ক রোহিত। “ওই ফাইনালের আগ পর্যন্ত আমরা যেভাবে খেলেছি, আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা তো ছিলই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তা করতে পারিনি। সত্যি বলতে, আমাদের সবার জন্যই তা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। কারণ, এতগুলো বছর ধরে এটির জন্যই আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি।” “আপনারা দেখেছেন যে প্রথম ১০ ম্যাচে আমরা কীভাবে খেলেছি। ফাইনালে অবশ্যই কিছু ব্যাপার আমরা ঠিকঠাক করতে পারিনি, যেটির মূল্য আমাদেরকে দিতে হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত খুব বেশি জায়গা নেই আঙুল তোলার যে এটা ভালোমতো করতে পারিনি বা ওটা পারিনি।” দেশের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়ার পর নানা দিক থেকে সমালোচনার স্রােত ধেয়ে এসেছে তাদের দিকে। তবে পাশাপাশি দলের বাইরে নানা জায়গা থেকে অনেক প্রেরণাও তারা পেয়েছেন। সেই ছোঁয়াই আবার রোহিতকে উজ্জীবিত করে তুলেছে সামনের চ্যালেঞ্জের জন্য। “এই ধরনের একটি ফাইনাল হারের পর সামলে ওঠা অবশ্যই কঠিন। তবে জীবনে এত কিছু হচ্ছে! এত এত ক্রিকেট হচ্ছেৃ সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিটুকু খুঁজে নিতেই হয়। আমারও সময় লেগেছে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে।” “তবে সামনে তাকাতেই হয়। আর সত্যি বলতে, ফাইনালের পর বাইরে থেকেও অনেক উৎসাহ পেয়েছি আমরা। ব্যক্তিগতভাবে সেটিই আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে আবার উঠে দাঁড়াতে ও নিজের কাজটুকু আবার শুরু করতে।” দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যেই শুধু নয়, নিজেদের পরিশ্রমের প্রতিদানের জন্যও সিরিজটি জিততে মুখিয়ে আছেন রোহিত। “আমরা যদি এটা অর্জন করতে পারি (এখানে সিরিজ জয়), সবারই খুব ভালো লাগবে, কারণ আমরা এত কষ্ট করেছি যে, সেটির প্রমাণ হিসেবে কিছু দেখাতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করছি আমরা। বড় কিছু তাই আমাদের প্রয়োজন।” “সবাই এটির জন্য মরিয়া, শুধু দুই-একজন সিনিয়র নয়। দেশ ও দলের জন্য বড় গৌরব বয়ে আনতে চায় সবাই। সব উপকরণই আমাদের আছে। স্রফে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে আমাদের। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে মুক্তভাবে খেলার এবং অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে না ভাবার।” শেষ পর্যন্ত ভারত যদি সিরিজ জিতেই যায়, তাহলে কি বিশ্বকাপ হারের ক্ষত শুকাবে? এবার রোহিত বুঝিয়ে দিলেন, সেটা হয়তো সম্ভব নয়। “এত বছর ধরে আমরা এখানে সফরে আসছিৃ সিরিজ জিততে পারলে অবশ্যই বড় ব্যাপার হবে। তবে জানি নাৃ যদি জিততে পারি, তা বিশ্বকাপ হারের যন্ত্রণায় প্রলেপ দিতে পারবে কি না। সত্যিই জানি না। বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই। এই সিরিজের সঙ্গে বিশ্বকাপের তুলনা করা কঠিন। এটা এমনিতেই বড় একটা সিরিজ।” রোহিতের কথায় স্পষ্ট আভাস, বিশ্বকাপ না পাওয়ার ব্যথা কেবল বিশ্বকাপ দিয়েই পুষিয়ে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদের সামনে সুযোগ আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। চার বছর পর ওয়ানডে বিশ্বকাপে রোহিত-কোহলিদের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ২০ ওভারের বিশ্বকাপই তাই আপাতত ভরসা। সমস্যা হলো, তারা দুজন এখন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে নেই! গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হারার পর দেশের হয়ে এই সংস্করণে আর খেলতে দেখা যায়নি অভিজ্ঞ এই দুই ব্যাটসম্যানকে। টি-টোয়েন্টি দলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারতীয় বোর্ড বা নির্বাচকদের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি নিশ্চিত করে। ধারণা করা হচ্ছিল, হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বে নবীনদের নিয়েই এই সংস্করণে সামনে এগোবে দল। কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপে রোহিত ও কোহলির অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর আবারও তাদেরকে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরানো নিয়ে আলোচনা চলছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। সেই সূত্রেই রোহিতকে জিজ্ঞেস করা হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তিনি মরিয়া কি না। সরাসরি উত্তর না দিলেও ভারতীয় অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন নিজের চাওয়া। “ক্রিকেট খেলতেই মরিয়া সবাই। সবারই সেই মরিয়াভাব আছে। সবাই খেলতে চায়, সবাই ভালো করতে চায়। যখনই যেখানে সুযোগ আসুক না কেন, ভালো করতে চায় সবাই। আমি জানি আপনি কী বোঝাত চাইছেন। তবে উত্তরটা উপযুক্ত সময়েই পাবেন।” টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলে অধিনায়ক হয়ে ফিরবেন নাকি স্রফে ব্যাটসম্যান হিসেবে, সেই প্রশ্নও উঠল। রোহিতের বাইরে থাকার সময়টায় মূলত নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পান্ডিয়া। এরপর তার চোট-অনুপস্থিতিতে লোকেশ রাহুল, জাসপ্রিত বুমরাহ, এমনকি রুতুরাজ গায়কোয়াড়ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। সবশেষ সাত টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করেছেন সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ। অধিনায়কত্ব ও ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্নে নেতৃত্বের অংশটুকু এড়িয়ে গিয়ে শুধু ব্যাটিংয়ের কথাই বললেন ৫১ টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া রোহিত। “ব্যাটার হিসেবে বললে, যতটা সম্ভব ভালো খেলছি আমি। তো হ্যাঁ, আমার সামনে যেটিই আসবেৃ সামনে যা আসবে, সবকিছুতেই খেলতে চাইব আমি।”