কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না রাখতে আফগান বোর্ডের কাছে অনুরোধ করেছিলেন মুজিব উর রাহমান, নাভিন উল হাক ও ফাজালহাক ফারুকি। পাশাপাশি বোর্ডের কাছে তারা অনুমতি চেয়েছিলেন বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে। কিন্তু তাদের এই চাওয়ায় বেজায় চটেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। দেশের হয়ে খেলার চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ এনে তিন ক্রিকেটারকেই শাস্তি দিয়েছে বোর্ড। এই তিন ক্রিকেটারের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিয়েছে এসিবি। পাশাপাশি বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, তিনজনের কাউকে আগামী দুই বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অনাপত্তিপত্র দেওয়া হবে না। এমনকি চলতি যে অনাপত্তিপত্র তাদের আছে, সেটিও বাতিল করা হয়েছে। কোনো ক্রিকেটার তার দেশের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকুক বা না থাকুক, দেশের বাইরের লিগে খেলতে হলে বোর্ডের অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন হয়। মুজিব এখন বিগ ব্যাশে খেলছেন মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে। নাটকীয় কোনো পালাবদল না হলে টুর্নামেন্টের সামনের ম্যাচগুলি তিনি খেলতে পারবেন না। নাভিন ও ফারুকি কদিন আগেই আবু ধাবিতে টি-টেন লিগে খেললেন। এসিবি বিবৃতিতে জানায়, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন চু্ক্িততে নিজেদেরকে না রাখতে বোর্ডের কাছে অনুরোধ জানান এই তিন ক্রিকেটার। তিনজনই এখনও তরুণ ও আফগানিস্তান দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। নাভিনের বয়স ২৪, ফারুকির ২৩ ও মুজিবের ২২। তারা চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাওয়ায় নড়েচড়ে বসে এসিবি। পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে এবং আফগান ক্রিকেটের স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপের সুপারিশ করতে একটি কমিটি নিয়োগ দেয় তারা। সেই ধারাবাহিকতায়ই এলো তাদের এই শাস্তির ঘোষণা। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে চাহিদা আছে বলে নাভিন তো সম্প্রতি ওয়ানডে থেকেও অবসর নিয়ে ফেলেছেন এই বয়সেই। টেস্ট তিনি খেলেননি কখনোই। এসিবির বিবৃতিতে ফুটে উঠেছে তাদের কড়া অবস্থান। এর তিন জনের শাস্তি দিয়ে অন্যদেরকেও বার্তা দিয়েছে তারা। “বাণিজ্যিক লিগে খেলতে চাওয়ার কারণেই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর না করতে জেদ ধরেছে এই ক্রিকেটাররা, আফগানিস্তানের হয়ে খেলা, যেটিকে মনে করা হয় জাতীয় দায়িত্ব, সেটির চেয়ে তারা প্রাধান্য দিয়েছে ব্যক্তি স্বার্থকে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাই এই ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” “এসিবির মূল্যবোধ ও নীতির পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতেই ফুটে উঠছে যে, প্রতিটি ক্রিকেটারকে এসিবির নীতিমালাকে মেনে চলতে হবে এবং ব্যক্তিগত ভাবনার চেয়ে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।” সম্প্রতি আইপিএলের নিলামে মুজিবকে ২ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। বিশ্বজুড়েই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তার চাহিদা প্রবল। আইপিএলে ফারুকিকে ধরে রেখেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, নাভিন আছেন লক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টসে। তিন জনই বছরজুড়ে নানা লিগে খেলে থাকেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলার জন্য নিজের দেশের বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এক যুগের বেশি সময় আগেই এই পথে হেঁটেছেন ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভোরা। পরে সেই পথ অনুসরণ করেছেন সুনিল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলসহ অনেক ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার। সম্প্রতি কাইল মেয়ার্স, জেসন হোল্ডার, নিকোলাস পুরানও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সই করেননি। এছাড়াও এরকম নজির আছে অন্যান্য দেশেও।