যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহায় মিলছে না নগরবাসীর। চলার গতি হঠাৎ থমকে যায় দীর্ঘ যানজটে। এ অসহনীয় যানজটের মূল কারণ রাস্তার পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাত দখল করে বসা হকাররা। রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং, স্থাপনা-দোকান রাজধানীতে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সড়ক দখল করে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে বাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, হিউম্যান হলার, রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। রাজধানীর বহু এলাকায় যত্রতত্র ও এলোপাতাড়ি গাড়ি পার্কিং চলছে। রাজধানীর যেখানে সেখানে বিশেষ করে রাস্তার দুপাশে, মার্কেট বা শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্কিং সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, ক্ষতি হচ্ছে দেশের অর্থনীতির। মহাসড়ক দখল করে অবৈধভাবে ট্রাক-বাসের পণ্য ও যাত্রী ওঠা-নামা এবং রাস্তা দখল করে ট্রাক, পরিবহন রাখায় প্রতিদিনই ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ছে মানুষ। এক গবেষণায় দেখা যায়, একটি আদর্শ শহরের আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় আছে মাত্র আট শতাংশ। যার মধ্যে যান চলাচলের জন্য ব্যবহার হয় মোটে পাঁচ শতাংশ। রাজধানীর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ যানজটের জন্য দায়ী অবৈধ গাড়ি পার্কিং। রাজধানী ঢাকায় যানজটে বছরে প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা অপচয় হয়। দেখা যায় বেশীরভাগ সময়ই মহাসড়কের পাশে ট্রাফিক পুলিশের অফিস থাকলেও এসব গাড়ির বিরুদ্ধে নেওয়া হয়না কোন ব্যবস্থা। আবার অনেক সময়ই পার্কিং অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক সময় রাস্তার মধ্যে পার্কিংয়ের জন্য চালক জায়গা খুঁজতে থাকেন। এ অবস্থায় একদিকে যেমন অতিরিক্ত জ্বালানি অপচয় হয়, অন্যদিকে রাস্তায় চলাচলকারী অন্য গাড়িগুলোর জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। পাশাপাশি অবৈধ পার্কিং এর কারণে ঢাকার রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে প্রায় অর্ধেক। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৪৭ ধারায় অনুযায়ী, সরকার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক পুলিশের পরামর্শে মোটরযান পার্কিং এলাকা নির্ধারণ করতে পারবে। নির্ধারিত এলাকা ছাড়া পার্কিং করা যাবে না, যদি কেউ করে তা হবে অপরাধ। এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। একই সঙ্গে চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করা হবে। কিন্তু এই আইন থাকা সত্ত্বেও তা পর্যাপ্ত প্রয়োগের অভাবে থামছেনা এই অবৈধ পার্কিং। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। গাড়ি পার্কিংয়ের যে সমস্যা, তার সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন, রাজউক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি ভবন, মার্কেট ও শপিংমলের নিজস্ব পার্কিং প্লেস নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে গাড়ির মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানীর ব্যস্ত মোড়গুলোতে নির্দিষ্ট স্টপেজ চালু করতে হবে। আর তাহলেই এই অবৈধ পার্কিং দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে রাজধানীবাসি।