এক সপ্তাহ আগেও যে আলু বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। অথচ আলুর দাম কোনো যুক্তিতেই এত বেশি হওয়ার কথা নয়। বোঝাই যাচ্ছে, বাজারে সিন্ডিকেটের কারসাজি অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি সরকার সহনীয় রাখার উদ্যোগ নেবে। ডিমের দাম কমানোর উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সেই আলামত লক্ষ করা গিয়েছিল। কিন্তু সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, ডিমের বাজারে কয়েকদিন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। অন্যান্য পণ্যের দাম কমানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগের কথা শোনা যায়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেট কারসাজি করে বাড়াচ্ছে সব পণ্যের দাম। বেড়েছে ডিমের দামও। দেশি পেঁয়াজ বাজারে এলেও বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। একসময় বলা হতো, ডাল-ভাত-আলুভর্তা হলো গরিবের খাবার। যার অবস্থা কিছুটা ভালো, তার পাতে জুটত ডিম, ব্রয়লার মুরগি অথবা পাঙাশ মাছ। এখন এর কোনোটিই গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। ডাল-ভাত-আলুভর্তাও যদি গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে তারা বাঁচবে কী খেয়ে? পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও দেশে হিমাগার মালিকদের কারসাজিতে গত জুন থেকেই অস্থির আলুর বাজার। পরে তদারকি জোরদার করা হলে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসে। আগস্ট শেষে ফের বাড়তে থাকে দাম। সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় বিক্রি হলে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজির খুচরা মূল্য ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারপরও দাম না কমায় অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ পর্যায়ে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। আমদানি করা আলু দেশে এলেও দাম কমছে না। কিন্তু এ অবস্থা তো চলতে পারে না। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। অথচ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। এ কারণে দিন দিন তাদের লোভ বাড়ছে, তারা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। বাজার তদারকির কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে আমরা বলতে চাই, নিত্যপণ্যের প্রতিটি বাজারে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো হোক। চিহ্নিত করা হোক সিন্ডিকেট। অসৎ ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করে আইনের আওতায় আনা হোক।