ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে দেশের সর্ব দক্ষিণের সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত ছয় লেনের আধুনিক সড়ক করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, আধুনিক সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে বরিশাল অঞ্চলে আর কোনো কষ্ট থাকবে না। পাশাপাশি ভোলার গ্যাস বরিশালে আনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় বরিশাল অঞ্চলের সাধারণ নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে বরিশালের সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে। সেই চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্যের মধ্যে তুলে ধরেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বরিশালবাসীর প্রাণের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এতে জনসমাবেশে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছে জানিয়ে কাজী মিজানুর রহমান আরও বলেন, আগে কোন সিটি মেয়র এভাবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বরিশালবাসীর দাবিগুলো তুলে ধরতে পারেননি। যেটা খোকন সেরনিয়াত তুলে ধরেছেন। যা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রধানমন্ত্রীর সামনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের জন্য ভোট চেয়েছেন বরিশাল সিটি কপরোশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। মেয়র প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রিয় নেত্রী আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে জাহিদ ফারুক শামীমকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আপনার মনোনীত প্রার্থী জনগনের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত ও জনপ্রিয়। আমি বিশ্বাস করি ৭ জানুয়ারি বরিশালের জনগন বিপুল ভোট দিয়ে জাহিদ ফারুককে বিজয়ী করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষনে বরিশাল বিভাগের আসন ওয়ারি নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে থাকেন। এমন সময় ডাকেন বরিশাল-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমকে। জাহিদ ফারুকের নাম বলেই প্রধানমন্ত্রী থেমে থাকেননি, তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তিনি গর্বের সাথে বলেন, জাহিদ ফারুক এই আসনের নৌকার প্রার্থী। তিনি একজন সৎ লোক। তাকে আমি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছি। পাঁচবছর তিনি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। যেখানে যখন ভাঙ্গন বন্যা প্লাবন হয়েছে তিনি সেখানে তাৎক্ষনিক ছুঁটে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। একজন সৎ ও যোগ্য লোক জাহিদ ফারুক শামিম। সেনা কর্মকর্তা থেকে রাজনীতি, রাজনীতি থেকে মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব নিরলস নিষ্ঠার সাথে পালন করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে লাখ লাখ লোকের সমাবেশে জাহিদ ফারুক তার সততার স্বীকৃতি পাওয়ায় উচ্ছাসে ও আনন্দে ফেঁটে পরেন তার সমর্থক এবং ভোটাররা। শনিবার দিনভর প্রধানমন্ত্রীর এ প্রশংসার বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে যেসব দাবি তুলে ধরেন সিটি মেয়র ॥ বরিশাল নগরীর উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি চেয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। সিটি মেয়র তার দীর্ঘসময়ের বক্তব্যে বরিশালবাসী ও নগরবাসীর জন্যই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বরিশাল নগরী একটি ঘণবসতীপূর্ণ এলাকা। তাই অতিদ্রুত অন্যত্র শহর স্থানান্তর প্রয়োজন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামের এই সিটি প্রকল্প হবে দক্ষিণাঞ্চলের সেরা মেগাসিটি প্রকল্প। ইতোমধ্যে এই প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বরিশাল সিটির বর্ধিত এলাকা, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট অনুন্নত। এসব কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে মেয়র বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো সমস্যা, স্বাস্থ্য সেবায় পিছিয়ে থাকাসহ নানা বিষয় তুলে ধরে তা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। মেয়র আরো বলেন, আমার নির্বাচনী শ্লোগান ছিলো নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গীকার, জয় হোক শেখ হাসিনার। এই শ্লোগানকে নগরবাসী সাদরে গ্রহণ করেছে। তাই এ শ্লোগান বাস্তবায়নে মেয়র প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। লুসির কণ্ঠে গান শুনলেন শেখ রেহানা ॥ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টের মানবিক আদর্শ আমাদের সবার ধারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন শেখ রেহানা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় লুসি হল্ট বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে যেসব চিঠি লিখেছিলেন তা সংরক্ষণ করা উচিত বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা। লুসিকে দেখতে ২৯ ডিসেম্বর বরিশাল নগরীর অক্সফোর্ড মিশনে গিয়ে তার (লুসি) শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়েছেন শেখ রেহানা। অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার জন জানান, শুক্রবার দুপুর সোয়া একটার দিকে তাদের মিশনে ফুল ও ফল নিয়ে আসেন জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। তার আগমনের খবর দুদিন আগে থেকেই তারা জানতেন। তবে উৎসুক জনতার ভীড় এড়াতে বিষয়টি অনেকটা গোপন রাখা হয়েছিলো। আড়ম্বরপূর্ণ কোনো আয়োজন নয়, মূলত লুসি হল্টের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেই এসেছিলেন শেখ রেহানা। ফাদার আরও জানান, হলরুমে ঢুকেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা লুসি হল্টের কাছে গিয়ে ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। লুসির পাশের চেয়ারে বসে অনেক মমতা নিয়ে লুসি হল্টের হাত ধরে কুশলাদি বিনিময় করেন। এ সময় বরিশালের নানা স্মৃতিচারণ করেন শেখ রেহানা। এ সময় শেখ রেহানা লুসি হল্টের কাছে গান শোনার আবদার করেন। লুসিও গান শোনান পরম কৃতজ্ঞতা নিয়ে। কাজী নজরুল ইসলামের ‘নাচ ময়ূরী নাচরে’ গানটি শোনেন শেখ রেহানা। এ সময় লুসির কণ্ঠে কণ্ঠ মেলান বঙ্গবন্ধু কন্যা। লুসি হল্টকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অক্সফোর্ড মিশন কর্তৃপক্ষ।