হেমন্তের শিশির জানান দিচ্ছে প্রচন্ড শীত। খেজুর গাছ থেকে নামবে মিষ্টি তরতাজা খেজুরের রস। এলাকার বিভিন্ন গাছিরা খেজুর গাছ খেকে প্রতিনিয়ত রস নামাচ্ছে। পরিচর্যা শেষে নলানো গাছে বেধেছে মাটির ঠিলে বা ভাড়(স্থানীয় ভাষা)। ঠিলে ভরে গাছ থেকে খেজুরের মিষ্টিরস প্রচন্ড শীতে নামাচ্ছে গাছিরা। নতুন পাতিলে রস আর গুড় এ মৌসুমে সবার বাড়িতে থাকে। তাই মৌসুমী ব্যবসা হিসেবে রসের হাড়ি, পিঠার ছাঁচ, গুড়ের খুঁড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার নতুন ভাড় তৈরির কুমারেরা। রস গুড়ের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলের কুমারেরা এখন বেশি ব্যস্ত ঠিলে বা কলস তৈরীতে। কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর, গোমরাইল,অনুপমপুর, সিংগিবাজার এলাকায় কুমাররা হরেক রকম মাটির তৈজসপত্র তৈরির সাথে রস গুড়ের পাতিল তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পালবাড়ির পুরুষের পাশাপাশি এ কাজে নারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছে। শীত মৌসুমে তাদের প্রধান ব্যবসা এ কারণে তারা দিন রাত সর্বসময় রসের ভাড় তৈরিতে ব্যাস্তসময় পার করছে। প্রতিদিন কাজ চলছে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। ঠিলে তৈরির ব্যবসা প্রতি বছর শীত মৈাসুম ছাড়া অন্য সময় হয় না, ব্যবসাটি প্রায় ৩ মাস হয়ে থাকে। কমোরেরা বলছেন শীত কালে বর্ষা হলে তাদের রসের ঠিলা তৈরি করতে বড় সমস্যা হয় ও তৈরি করা ঠিলা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। ঠিলা আগুনে পোড়াতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাশের পাতা আখের পাতা কুড়িয়ে এনে পোড়াতে হয়। আগের মত গাছের পাতা ও ঠিকমত পাওয়া যায় না। বিেিশষ করে বাশের পাতায় ঠিলা পোড়ালে ঠিলার পোড় ও রং ভাল হয় এবং ভাড় গুলি মজবুত হয়ে থাকে। এসব বাশের পাতা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঝাড়- দিয়ে কুড়িয়ে বস্তা ভর্তি করে বাড়িতে আনতে হয়, ফলে এ কারণে তাদের ব্যায় ও বেশি হয়। একদিকে চলছে কাদামাটির তৈরী পাতিল রোদে শুকানো অপরদিকে চলছে বিশাল চুল্লিতে আগুনের তাপে ভাড় পোড়ানোর কাজ। খেজুর গাছের সংখ্যা এলাকায় হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক হারে। তাই চাহিদা কম হলেও সীমিত লাভে কুমোরেরা ধরে রেখেছেন বাপ- ঠাকুরদার দীর্ঘ দিনের পেশাকে। এ পেশার ব্যবসাই তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চলছে।শীতকে ঘিরে কুমারেরা তৈরি করছেন মাটির নানান পণ্য। খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য মাটির ঠিলা বা ভাড় (আঞ্চলিক ভাষা), গুড় পাটালির জন্য মাটির খুঁড়ি ও কলস, এবং পিঠা তৈরির ছাঁচ চাহিদা সব থেকে বেশি থাকায় বিরামহীন ভাবে চলছে এসব মাটির তৈজসপত্র তৈরির কাজ। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে তাদের তৈরিকৃত পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। সেখানে, হাড়ি, ঢাকুন, ফুলের টব, কলস, ব্যাংক, পণ্যগুলো ২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০ টাকার পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের গুড় তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাটির খুঁড়িতে রেখেই জমাতে হয় মুছি পাটালি। এ বছর ভালো মানের নতুন খুঁড়ি কিনছি ১৫ টাকা পিস। রস সংগ্রহের জন্য মাটির ঠিলে ৩০ টাকা, গুড়ের জন্য বড় আকারের লম্বা কলস ৪০ টাকা। কম দামে ভালো মানের জিনিস পেয়ে খুশি তিনি। কুমার মধু পাল জানান, এ পেশায় আগের মতো লাভ হয়না। বংশের ঐতিহ্য ধরে রেখেছি মাত্র। এ বছর চাহিদা কম থাকার কারণে দাম অনেক কম। দাম বাড়াতে পারিনি পূর্বের দামেই বিক্রি করছি। এই মৌসুমে বেচাকেনা অনেক ভালো হবে বলে আশা করছি। আবহাওয়া যেমন আছে এভাবে অনুকুলে থাকলে ভালোই হবে। বিশেষ করে এলাকায় খেজুর গাছ কম খাকার কারণে আগেরমত এখন খেজুরের রস হয় না। আগে গাছ বেশি ছিল ও উন্ননত মানের গাছিরা গাছ কাটলে ভাল মানের রস হত। কিন্তু এখন বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে খেজুর গাছের সংখ্যা কম থাকার কারণে তাদের রসের ভাড় ও বেশি বিক্রি হয় না। এই প্রচন্ড শীতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাদা মাটি ও পানিতে যে কষ্ট তা ভাড় বিক্রি করে তেমন টা লাভ হয় না। তার পর ও তাদের পেশার কারণে ও পরিবারের পরিজন নিয়ে বেচে থাকার কারণে এ ব্যবসা ধোরে রাখছে হয়েছে।