যশোর পিছিয়ে থাকা নৌকা এখন ট্রাকের আগে চলতে শুরু করেছে - এমনটাই বলছেন যশোর ২ (ঝিকরগাছা - চৌগাছা) আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ৬ জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে একজন প্রার্থী তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে ট্রাক প্রতীকের। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেন ডাক্তার তৌহিদুজ্জামান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদের জামাতা এবং বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তার দলীয় কোন পদ পদবী নাই। অপরদিকে ট্র্যাক প্রতীকের প্রার্থী হলেন দশম জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যশোর ২ ঝিকরগাছা চৌগাছা আসনে যে ৬ জন প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন -স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম হাবিবুর রহমান, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর প্রতীক - ঈগল, বাংলাদেশ কংগ্রেস এর আবদুল আউয়াল- ডাব প্রতীক, জাতীয় পার্টির মোঃ ফিরোজ শাহ - লাঙ্গল প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী, দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম - ট্র্যাক প্রতীক, এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর মোঃ শামসুল হক - টেলিভিশন প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্রার্থীদের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের এস এম হাবিবুর রহমান তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নৌকা প্রতীকে সমর্থন জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, যশোর ২ আসনে (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) ঝিকরগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা রয়েছে। উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৯৫ টি, ভোট কক্ষ স্থায়ী ৫১২ টি এবং অস্থায়ী ২২ টি। উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৯ হাজার ৮০৯ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৯ হাজার ৮১৬ জন। একইভাবে চৌগাছা উপজেলায় ১১ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা রয়েছে। উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৮১ টি। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজার ৬১৪ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ৯৭ হাজার ৪৫২ জন। এ সংসদীয় আসনে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৯১ জন। ঝিকরগাছা - চৌগাছা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং একাধিক মানুষের সাথে আলাপে জানা গেছে - আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাক্তার তৌহিদুজ্জামান ঝিকরগাছার কৃত্তিপুর নিজ এলাকায় গত ১৫ ই আগস্ট শোক দিবস পালনের মাধ্যমে তার প্রথম পরিচিত ঘটে। এজন্য নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় প্রথম দিকে দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে তেমন সাড়া জাগেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। তিনি দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি প্রথম থেকেই সরগরম করে তোলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামের পক্ষে রয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল এবং সাধারণ সম্পাদক মুসা মাহমুদ, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশ কিছু চেয়ারম্যান সহ নেতা কর্মীও তার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডাক্তার তৌহিদুজ্জামান এর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে রয়েছেন- ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, চৌগাছা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন), চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোস্তানিসুর রহমান, পৌর মেয়র নুরউদ্দিন আল হিমেল সহ ইউনিয়ন পর্যায়ের অধিকাংশ চেয়ারম্যান এবং নেতৃবৃন্দ নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একাধিক আওয়ামী লীগের কর্মীরা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামের বিগত দিনের কর্মকান্ডের চুল চেরা বিশ্লেষণ করে কর্মীরা ভোটের মাঠে ভোট দিতে যাবেন। তবে প্রথম দিকে নৌকার প্রার্থী ডাক্তার তৌহিদুজ্জামানের পক্ষে গণজোয়ার না উঠলেও ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে গণজোয়ার শুরু হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ের দলকানা নেতাকর্মী দলের নিজস্ব প্রতীকের বাইরে যাবেন না বলে এমনটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে। আবার সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবেও ব্যক্তি ইমেজে নৌকা প্রতীকের বাইরেও ভোট পড়বে এমন ধারণাও রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মোঃ ফিরোজ শাহ "লাঙ্গল" প্রতীকে, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবদুল আউয়াল "ডাব" প্রতীকে এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল লিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ এর শামসুল হক "টেলিভিশন" প্রতীকে মাইকিং প্রচারণায় রয়েছে। গণসংযোগে তেমন একটা সাড়া পড়েনি। স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ এ সকল প্রার্থীগণ বিএনপি জামাতের ভোটারদের উপরে অনেকটা ভরসা করে আছেন। সাধারণ ভোটারদের ধারণা - অনেক প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। রাজনৈতিক বোদ্ধগণ বলছেন- বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আজকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দিতা মূলক হতো। নির্বাচনটি হচ্ছে জমজ ভাই এবং সৎ ভাইয়ের সম্পর্কের মত। এখানে জমজ ভাই বলতে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বোঝানো হয়েছে। সৎ ভাই বলতে জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দলকে বোঝানো হয়েছে। চৌগাছা উপজেলার আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মী শফিকুল ইসলাম জানান - আওয়ামী লীগ যারা করেন এবং নেত্রী শেখ হাসিনাকে যারা ভালোবাসেন তারা অবশ্যই নৌকা মার্কা প্রতীকে ভোট দেবে, অন্য কোন প্রতীকে ভোট দেবেনা। ঝিকরগাছা উপজেলার ৮ নম্বর নির্বাসখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ খায়রুজ্জামান বলেন - বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকা। তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকার প্রার্থী ডাক্তার তৌহিদুজ্জামানকে বিজয়ী করতে ৭ তারিখের অপেক্ষায় রয়েছেন ঝিকরগাছা বাসী। চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অবায়দুল ইসলাম সবুজ বলেন - ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম একজন কর্মীবান্ধব, জনবন্ধব নেতা। তিনি বিজয়ী হলে জনগণের বিজয় হবে। তার বিজয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী। চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান জানান - দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আমি ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নৌকা প্রতীকে সমর্থন জানিয়েছি। এজন্য চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই একজন নেতা বাদে অধিকাংশ নেতাকর্মী নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন। চৌগাছাবাসী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবে, ইনশাল্লাহ। ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল জানান -প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে ঝিকরগাছায় ট্রাক প্রতীকের বিজয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চৌগাছার খবর আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডাক্তার তৌহিদুজ্জামান অথবা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম বিজয়ী হবেন, সেই প্রতীক্ষায় রয়েছেন ঝিকরগাছা - চৌগাছাবাসী।