টানা কর্মসূচি দিয়েও আন্দলনের কার্যকারিতা হারাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ মামলার আসামি, প্রকাশ্যে এলেই হচ্ছেন গ্রেপ্তার; এ অবস্থায় বিএনপি বুঝতে পারছে যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তফসিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে এবং তাই দলটি এখন নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের কৌশল তৈরি করছে। অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বলেছেন, দলটি এখন আন্দোলনের সাথে একটি ধীরগতির নীতি নিয়েছে এবং সাধারণ নির্বাচনের পরে এটি আরও জোরদার করবে। ২০ ডিসেম্বর ঘোষিত বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করতে এবং ৭ জানুয়ারী ভোট দেওয়ার জন্য ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য জনগণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচন ঠেকানো সম্ভব নয়। আমাদের দলের বিপুল সংখ্যক লোক কারাগারে এবং অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক রয়েছে। তাই ভিন্ন পথে হাটছে দল। সূত্র জানায়, গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলেও দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কারাগারে, অনেকে পলাতক এবং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তারা কোনো তীব্র আন্দোলন শুরু করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সূত্র আরা জানায়, ২৮ অক্টোবর শুরু হওয়া বিএনপির আন্দোলনের ফলাফল পর্যালোচনা করে, তাদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে গণসংযোগের মতো তুলনামূলকভাবে নরম কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে রাখতে ৬ জানুয়ারি থেকে ৭২ ঘণ্টা বিরতিহীন হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী সংস্থা। নির্বাচনের পর দলটি নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে সূত্র জানায়। বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সরকার যথাসময়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে বলে তারা স্পষ্টতই মেনে নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এ কারণেই আমরা নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি কারণ এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী ১২ দফা অবরোধ এবং চার দফা হরতাল কার্যকর করেছে বিএনপি ও তার সহযোগীরা। ২৬ ডিসেম্বর থেকে তারা গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপি নেতারা এর আগে নির্বাচন বানচালের জন্য কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিলেও তারা এ ধরনের আন্দোলন করতে ব্যর্থ হন। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকায় আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন দলের উচ্চপদস্থরা। রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত না করে শুধু হরতাল বা অবরোধের ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন দলের অনেক নেতা। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমরা এখন জনগণকে ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করতে একটি গণ-যোগাযোগ কর্মসূচি পালন করছি। এই কর্মসূচির পর আমরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল বা অবরোধে যেতে পারি বলেন তিনি। নির্বাচনের পরও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের কয়েকজন নেতা বলেন, নরম কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কারণ তারা মনে করেন এই কর্মসূচি নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। গত সোমবার ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের ভোটাধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। যাদের সাহস ও সামর্থ্য আছে তারা প্রতিদিন এই চলমান আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুন। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে যারা সরাসরি কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না তাদের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করা উচিত, বলেন তিনি।