দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বুধবার (৩ জানুয়ারি) ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে উপজেলার জনপথ। দিনের বেলাতেই আঞ্চলিক ও মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। ঘন কুয়াশার সাথে সাথে শৈত্যপ্রবাহের জন্য প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না, ফলে শহর ও রাস্তাঘাট থাকছে জনশূন্য। দীর্ঘদিন ছুটির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা (ভিজিবিলিটি) কম থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন এই অঞ্চলের ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষজন। বুধবার (৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আদ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ এবং বাতাসের গতি ছিল ০১ নটস। একইভাবে সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯শতাংশ এবং বাতাসের গতি ০৩ নটস। উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের নারী খেতমজুর মিনতি মার্ডী (৪০) বলেন, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের মধ্যে জমিতে কাজ করা খুবই কষ্টকর হয়ে গেছে। জমিতে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়ার নৃ-গোষ্ঠীর নারী ক্ষেতমজুর ফুলমনি হেম্ব্রম (৩১) ও পুষ্প মার্ডী (২৮) বলেন, তীব্র শীত আর শৈত্যপ্রবাহসহ ঘন কুয়াশার কারণে খেতখামারে কাজ করতে যেতে পারছেন না। গত দু’দিন কাজে গেলেও শীত আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে বুধবার (৩ জানুয়ারি) কাজ করতে যেতে পারেননি। এতে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুগর্তিতে পড়েছেন তারা। ফুলবাড়ী পৌরশহরের রিকশা চালক আফজাল হোসেন (৩৮) বলেন, ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের জন্য প্রায় মানুষ শূন্য থাকছে শহর। এতে যাত্রীর অভাবে আয় কমে গেছে। বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুর ১টা পর্যন্ত আয় হয়েছে মাত্র ১৭৫ টাকা। যা অন্য দিনের তুলনায় কম। অন্যদিনে একই সময়ে অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। ফুলবাড়ী পৌর বাজার এলাকার মুদি দোকানী আহম্মেদ আলী বলেন, কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ আর শীতের কারণে বেচাবিক্রি একেবারেই কমে গেছে। সারাদিনে দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মালামাল বেচাবিক্রি হচ্ছে। মটর পরিবহন শ্রমিক আবদুল খালেক বলেন, ঘন কুয়াশায় ১০ হাত দূরের কোন কিছু দেখা যাচ্ছে না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে সময় ও জ্বালানি খরচ বেশি হচ্ছে। কার চালক নূর আলম বলেন, শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কুয়াশার কারণে ১০ হাত দূরের কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। তাই হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে সাবধানে চলাচল করতে হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিউল ইসলাম বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নের দুস্থ শীতার্তদের জন্য সরকারিভাবে ৪ হাজার ১৬০ টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দুস্থ শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে আরো কম্বলের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।