বরিশালের মুলাদীতে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মোকছেদ আকনের বাড়ির সামনে এই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম মো. রুবেল শাহ (৩৬)। তিনি টুমচর গ্রামের সেকান্দার শাহের ছেলে এবং বাটামারা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নার্গিস বেগমের স্বামী। রুবেল বাটামারা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বাটামারা ইউনিয়নের হাজী গ্রুপ ও আকন গ্রুপের মধ্যে শান্তিচুক্তির ৫ মাস ১১ দিন পর এই হত্যার ঘটনা ঘটল। টুমচর গ্রামের আকন গ্রুপের লোকজন শান্তিচুক্তির শর্ত ভেঙে মোকছেদ আকন, ফারুক হাওলাদার, লোকমান ওরফে লোকমান ডাকাতের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে রুবেল শাহকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনেরা। রুবেল শাহ বাটামারার হাজী গ্রুপের লোক ছিলেন এবং সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর লাঙল প্রতীকের পক্ষে কাজ করছিলেন। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. আমিনুল হক কবিরের ঈগল প্রতীকের কর্মী ছিলেন বলে দাবি কনেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নির্বাচন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে হত্যাকা- হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের। তবে পুলিশের দাবি, এটা নির্বাচনি সহিংসতা নয়, হাজী ও আকন গ্রুপের দ্বন্দ্বে হত্যার ঘটনা ঘটেছে নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, রুবেল শাহ সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে ৩ দিন আগে বাড়িতে আসেন। বুধবার সকালে রুবেল শাহ বাড়ি থেকে জাগরনী বাজারে যাওয়ার পথে মোকছেদ আকনের বাড়ির সামনে পৌঁছলে মোকছেদ আকন, লোকমান ওরফে লোকমান ডাকাত, ফারুক হাওলাদার, রকিব সরদার, আব্বাস ব্যাপারী, মনির সরদার, তোতা মোল্লা, আ. রাজ্জাক হাওলাদার, মনির হাওলাদার, দুলাল হাওলাদারসহ ২০-২৫ জন লোক রামদা, চাপাতি ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা রুবেল শাহকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে চলে যায়। সংবাদ পেয়ে বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে বরিশাল হাসপাতালে নেওয়ার পথে কালকিনি খাসেরহাট এলাকায় তার মৃত্যু হয়। বাটামারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দীন অশ্রু জানান, রুবেল শাহ লাঙল প্রতীকের পক্ষে কাজ করছিলেন। তবে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা নিয়ে কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব কিংবা বাগবিতান্ডা হয়নি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাটামারা ইউনিয়নে হাজী ও আকন গ্রুপের মধ্যে প্রায় ২৩ বছর ধরে বিরোধ ছিলো। বরিশাল জেলা পুলিশ ও মুলাদী থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় ২০২৩ সালের ২২শে জুলাই ওই দুই পক্ষের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে শান্তিচুক্তির শর্ত ভেঙে একটি গ্রুপ রুবেল শাহকে কুপিয়ে হত্যা করে থাকতে পারে। মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর জেলা হাসপাতালে মর্গে নেওয়া হয়েছে। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।