ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ ৪ আসনে ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তন্মধ্যে পদধারী কমিটির প্রথম সারির নেতারাসহ বিভিন্ন গ্রাম এলাকার কর্মীসমর্থকরা। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নেতারা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের প্রক্ষে ভোটের প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত হবে। ঝিনাইদহ ৪ আসনের প্রচারনা ও ভোট ভিক্ষা ব্যাপক ভাবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা চালিয়েছেন। এ আসন থেকে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিট নৌকা নিয়ে আনোয়ারুল আজীম আনার, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতিক নিয়ে আবদুর রশিদ খোকন, জাতীয় পাটির এমদাদুল ইসলাম বাচ্চু লাঙ্গল প্রতিক, সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ছানা ঈগল পাখি,ও তৃনমুল বিএনপির নুর উদ্দিন আহম্মেদ সোনালি আঁশ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। এবারের নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদিন প্রচার মাইক, পোষ্টার সাটানো ও ভোট প্রার্থনা করছে ভোটারদের নিকটে। কিন্তু ঈগল প্রতিকের নজরুল ইসলাম ছানা আদ্যবধি প্রচার মাইক বের করেননি, পোষ্টার পর্যন্ত কোথাও দেখা মেলেনি এবং কার ও কাছে ভোট প্রার্থনা পর্যন্ত করেননি। এ আসনের কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা ঝিনাইদহ সদরের ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে আসনটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে থাকে। বিশেষ করে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার হাটবাজারে, গ্রাম এলাকার নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রার্থীরা ও তাদের সমর্থকরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান, হাটবাজার আর বাড়ি বাড়ি প্রচারনা চালিয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর কোমর বেঁধে মাঠে নামেন প্রার্থীরা, শেষ পর্যায়ে ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমন টা বলছেন ভোটাররা। ফলে স্বতন্ত্রদের চাপে চরম বেকায়দায় পড়েছেন সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থী। ইতোমধ্যে ভোট নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার পদধারী প্রথম সারির নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোটের প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। অপর প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবদুল মান্নানের ছোট ভাই আবদুর রশিদ খোকন ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। তিনি রাজনৈতিক মাঠে নতুন মুখ হলেও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান পরিবারের সদস্য হওয়ায় দলের একটি অংশ তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ভোটাররা বলছেন, এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম আনার ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আবদুর রশিদ খোকনের সাথে। এই আসনে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের মধ্যে জোরালো গ্রুপিং রয়েছে।একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের আনোয়ারুল আজিম আনার। তার পক্ষে কাজ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু,পৌরমেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিবলি নোমানী,শাহানাজ পারভীন, একাধিক কমিশনার, ইউনিয়ান পরিষদের চেয়ারম্যান,বিভিন্ন শ্রমিক কর্মচারী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অপর গ্রুপে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ খোকনের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খান, আওয়ামী লীগ নেতা ইসরাইল হোসেন, সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম আনার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে ঝিনাইদহ ৪ আসনে। তিনি ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে নানাবিধ সমস্যা শোনেন ও সমাধান করেন। তিনি চলাচলের সময় কোনো পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা মটর সাইকেল চালিয়ে ছুটে বেড়ান। সব থেকে আলোচিত বিষয়, তার নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে যান, দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং শোকার্ত পরিবারকে শান্তনা দেন। এমনও হয়েছে তিনি এক দিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে শান্তনা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি অন্তত ৫ সহস্রাধিক মৃত ব্যাক্তির জানাজার নামাজ পড়েছেন। তিনি পর পর ২ বার এমপি, একবার উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইবার পৌর কাউন্সিলার হিসাবে মানুষের সেবা ও উন্নয়ন করেছেন।
ঝিনাইদহ ৪ আসনে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৫ হাজার ৩২৯ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৫ জন, নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬০ এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন ৪ জন।
নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, বিগত ১০ বছরে কালীগঞ্জে প্রতিটি এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভাট, স্কুল-কলেজ,মাদ্রাসা,মসজিদ,মন্দির, বিভিন্ন সরকারি ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। আমি সব সময় মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, এবারও ভোটাররা নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিবেন।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ খোকন বলেন,বিজয়ী হতে পারলে আমি সব সময় এলাকার মানুষের সকল সমস্যার কথা শুনে সমাধান করবো,উন্নয়ন কাজের কোন ঘাটতি রাখবো না। জনগনের ক্ষেতমত, উন্নয়নসহ সকল মানুষের পাশে আমি থাকবো।
বিশেষ করে এ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানা এখন বিশেষ আলোচনায় রয়েছেন তিনি ঈগল প্রতিকের প্রার্থী হলেও কোনদিন প্রচার মাইক বের করেন নাই, কালীগঞ্জ শহর ও কোন গ্রাম এলাকায় সমর্থক,কর্মী দেখা মেলেনি। আবার পোষ্টার পর্যন্ত ঝুলায় নাই এবং কারও কাছে নিজের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন নাই। শুধু মাত্র কাগজ কলমেই ঈগল প্রতিকের প্রার্থী সেজে বসে রয়েছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন নজরুল ইসলাম ছানা। নিজে প্রার্থী হলেও নেই কোনো প্রচার প্রচারনা। এমনকি নির্বাচনি এলাকায় তার প্রতীকের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি। ভোটের মাঠে প্রচার ও ভোট প্রার্থনায় বিরত রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানা। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের জন্য কোথাও কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি তাকে।
তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির জড়িত রয়েছেন। এর আগে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতুর কাছে পরাজিত হন। শহর এলাকায় প্রচারনা তুঙ্গে থাকলেও গ্রামাঞ্চলে ভোটের আমেজ তুলনামূলক কম তারা সবাই পেশায় কৃষক,তারা বলছেন, গ্রামের মানুষের ভোট নিয়ে আগ্রহ অনেকটা কম। তারা বুঝেই উঠতে পারেননি নির্বাচন কী বা কেন হচ্ছে ? আগ্রহ কম হওয়ায় ভোট কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা কম হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।পাড়া-মহল্লায় পোস্টারে ছেয়ে গেছে, গ্রামের বাজার গুলোতে প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোট চেয়েছেন সমাবেশ করেছেন এবং তারা উন্নয়নের প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন।