আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ না হতেই রাজশাহীতে ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। মিলছে বিভিন্ন সংসদীয় আসন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও আইডি পেতে রাখার খবর। তবে শুক্রবার বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, বৃহস্পতিবারদিবাগত গভীর রাতে রাজশাহীর তিন উপজেলায় চার ভোটকেন্দ্রে অগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। একটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণও ঘটানো হয়েছে। পরে সেখান থেকে আরও দুইটি তাজা ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ। ভোটের আগে জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে এমন অগ্নিসন্ত্রাস হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ঝিনা ও জুতনশি নির্বাচনী কেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও স্কুলের আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এর মধ্যে বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের ১৫টি চেয়ার, টেবিল, আলমারিসহ বেশ কিছু আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
এ ঘটনায় বাঘা উপজেলার ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরাদ আলী বলেন, বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। অফিসের পেছনের জানালার ফাঁক দিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে পেট্রোলও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় রাজশাহীর বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, উপজেলার জুতনশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের পরিত্যক্ত ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি মূল ভোটকেন্দ্রের বাইরের অংশ। এই আগুনের ফলে ভোটকেন্দ্রের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ ছাড়া উপজেলার আড়ানী পৌরসভার ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষকের অফিসে আগুন লাগে। এতে কিছু বই ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। আগুন লাগার কারণ তদন্তের পরই নিশ্চিত করে বলা যাবে।
অন্যদিকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের আক্কেলপুর উচ্চবিদ্যালয় ও মোহনপুর উপজেলার মতিহার উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর বাগমারা উপজেলার ভোটকেন্দ্র থেকে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকালে আরও দুইটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজশাহীর বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, উপজেলার আক্কেলপুর উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা রাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ভোটকেন্দ্রের সামনে দুটি অবিস্ফোরিত তাজা ককটেল পাওয়া যায়। পরে সেগুলো উদ্ধারের পর নিষ্কিৃয় করা হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে এখনও শনাক্ত বা আটক করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, ভোটের আগে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। এসব ঘটনা ভোটের ওপরে কোনো প্রভাব ফেলবে না। স্কুলগুলোতে কীভাবে আগুন লেগেছে তার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর তানোর উপজেলার সদর পৌরসভা এলাকার গোল্লাপাড়া মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রব্বানীর (কাঁচি প্রতীক) নির্বাচনী জনসভা চলাকালীন সময় একটি বোতলে আইইডি (উন্নত বিস্ফোরক ডিভাইস) সদৃশ সার্কিট পাওয়া যায়। পরে র্যাব-৫ এর উপণ্ডঅধিনায়ক মেজর হাসান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি অপারেশনাল দল দ্রুত ঘটনা স্থানে পৌঁছে উদ্ধারের পর সার্কিট লাগানো ওই বস্তুটিকে গোল্লাপাড়া বাজারের কাছে থাকা ফাঁকা মাঠে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সেটি নিষ্কিৃয় করে।