বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ অক্টোবরে ১.৫৯ লাখ কোটি টাকার তুলনায় ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষে ১৮,০০০ কোটি টাকা কমে ১.৪১ লাখ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ১.৬৫ লাখ কোটি টাকা এবং আগস্টে ১.৭৫ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি সিকিউরিটি আকারে ছিল, যার মধ্যে ট্রেজারি বিল এবং ট্রেজারি বন্ড রয়েছে। প্রধানত উচ্চ খেলাপি ঋণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি বৃদ্ধি, আমানতের স্বল্প বৃদ্ধি সহ নানা কারণে ব্যাংকগুলি তারল্য ঘাটতিতে ভুগছিল। চলমান ডলার সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় ২৭.৮২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এই পরিমাণের মধ্যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬.৭ বিলিয়ন, ২০২৩ অর্থবছরে ১৩.৫ বিলিয়ন এবং ২০২২ অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছিল। ডলার বিক্রির কারণে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১শে আগস্টের ২৩.২৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২১.৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সরকারের উচ্চ ব্যাংক ঋণের কারণে জুলাই ও আগস্ট মাসে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার গত অর্থবছরে ৫৯,৮৩৩ কোটি টাকা ধারের বিপরীতে ২০২৩ অর্থবছরে ১,২৪,১২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। মোট পরিমাণের মধ্যে, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৯৮,৮২৬ কোটি টাকা এবং ২০২৩ অর্থবছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি থেকে ২৫,২৯৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে আর্থিক বাজারে অর্থ সরবরাহ বেড়েছে, ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। ২০২২ সালের জুনে ব্যাংকগুলিতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২,০৩,৪৩৫ কোটি টাকা। তারপর থেকে, এটি ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। তারল্য ঘাটতির ফলে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কল মানি মার্কেট থেকে আন্তঃব্যাংক ঋণ গ্রহণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। কল মানি রেট গত বৃহস্পতিবার ৯.২১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির চাপে অনেকেই আমানত তুলে নেন এবং হাতে নগদ টাকা ধরে রাখছেন। ফলে অক্টোবরে দেশের ব্যাংকগুলোর বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ রয়ে গেছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান তারল্য সঙ্কট অনুমানের বাইরে ছিল না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সঙ্কট চলছে, অথচ এটাকে কোনো সমস্যাই মনে করছে না সরকার। এখন সঙ্কট স্বীকার করে তা কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিতে হবে। এসময় ব্যাংকগুলোকে শুধু উৎপাদনশীল খাতে ঋণ দিতে হবে। সেইসঙ্গে বাড়াতে হবে তদারকি। যারা ব্যাংক খাতের এ অবস্থার জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংককে মানুষের আস্থায় আনতে হবে। মিউঁচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "ব্যাংকগুলোতে লিকুইডিটি স্ট্রেস তৈরি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কন্ট্রাকশনারি মনেটারি পলিসি নেওয়ার মাধ্যমে ইনফ্লেশনকে কন্ট্রোল করতে চাচ্ছে।" অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ইনফ্লেশনকে কন্ট্রোল করা প্রধান লক্ষ্য হওয়াই উচিত বলে মন্তব্য করেন এই ব্যাংকার। তবে ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব ব্যাংক এখনো লিকুইডিটি স্ট্রেসে পড়েনি। যেসব ব্যাংক ডিপোজিট বেশি পাঁচ্ছে, তাদের লিকুইডিটি স্ট্রেস এখনো তৈরি হয়নি। তবে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলো বেশি চাপে থাকায় এর প্রভাব ভালো ব্যাংকগুলোতেও পড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।