আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট জেলার ৪টি আসনে বিভিন্ন দল ও ৩ জন স্বতন্ত্র মিলে ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। চারটি আসনেই আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন। ভোটের মাঠে এগিয়েও রয়েছেন তারা। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রন না করায় আওয়ামী লীগের বিপরীতে শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দী নাই বললেই চলে। নৌকার প্রার্থীদের সাথে অন্যান্য দলের ও স্বতন্ত্র পার্থীদের খুব বেশি প্রতিদ্বন্দীতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদার ও এম আর জামিল হোসাইন ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের এলাকায় তেমন পরিচিতি তো নেই, ভোটাররাও চেনেন না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট) আসনে আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দিন, জাতীয় পার্টির মোঃ কামরুজ্জামান, তৃনমূল বিএনপির মাহফুজুর রহমান, লাদেশ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (বিএনএম)-এর মোঃ মঞ্জুর হোসেন শিকদার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির বাসুদেব, বাংলাদেশ কংগ্রেস-এর আতাউর রহমান আতিকী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। তবে এই আসনটিতে শেখ হেলাল উদ্দিন ছাড়া অন্যকোন প্রার্থীরা ভোটের মাঠে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। প্রচার-প্রচারণাও ছিল নামকাওয়াস্তে। সাধারণ মানুষের ধারণা এই আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন বিপুল ভোটের নির্বাচিত হবেন। ভোটের হিসেবে নৌকার কাছাকাছিও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই কোন প্রার্থীর।
বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের শেখ তন্ময়, জাতীয় পার্টির হাজরা সহিদুল ইসলাম, জাকের পার্টির খান আরিফুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (বিএনএম)-এর সোলায়মান শিকদার, তৃনমূল বিএনপির মরিয়ম সুলতানা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আজমল হোসেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। শেখ তন্ময় ছাড়া অন্য ৫ প্রার্থীকে সকল ভোটাররা চেনেনও না। শুরু থেকে তাদের তেমন কোন প্রচার-প্রচারণাও ছিল না। যতটুকু না করলে নয়, তার মধ্যেই ছিলেন তারা। নৌকার প্রার্থী শেখ পরিবারের সদস্য হওয়ায় ভোটের মাঠে অতিরিক্ত গুরুত্ব পাচ্ছেন। বিপুল ভোটে তিনি নির্বাচিত হবেন এমনটি ধারণা করছেন সাধারণ মানুষ।
বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে আওয়ামী লীগের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, জাতীয় পার্টির মোঃ মনিরুজ্জামান মনি, জাসদের শেখ নুরুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (বিএনএমম)-এর সুব্রত মন্ডল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মফিজুল ইসলাম গাজী, তৃনমূল বিএনপির মিঃ ম্যানুয়েল সরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারাদার ভোটের মাঠে রয়েছেন। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের ইদ্রিস আলী ইজারাদার ছাড়া অন্য পাঁচজনকে বেশিরভাগ ভোটাররা চেনেন-ই না। এই আসনে নিজ দলের স্বতন্ত্র পার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদারের সাথে নৌকার প্রার্থী হাবিবুন নাহারের কিছুটা প্রতিদ্বন্দীতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাবিবুন নাহার নিজে তিন বারের সংসদ সদস্য এবং খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে তার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই আসন থেকে নৌকার-ই জয় হবে।
বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে আওয়ামী লীগের এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, জাতীয় পার্টির সাজন কুমার মিস্ত্রি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মুহাম্মদ লোকমান, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মুহাম্মদ বদরুজ্জামান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (বিএনএম)-এর রেজাউল ইসলাম রাজু, তৃনমূল বিএনপির লুৎফর নাহার রিক্তা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জামিল হোসাইন প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমআর জামিল হোসেন ভোটের মাঠে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করলেও, সহজে নির্বাচনী বৈতরনী পার হবেন নৌকার প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা কাগজ-কলমে থাকলেও, প্রচার-প্রচারণা ও ভোটের মাঠে তাদের অবস্থান নেই বললেই চলে।
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকু বলেন, ২০০৮ সালেও বাগেরহাটের ৪টি আসনে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সরকার পদ্মা সেতু, স্কুল কলেজ, রাস্তা-ঘাট নির্মানসহ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। যার ফলে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের পক্ষে ব্যাপক জনমতের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি আসলেও, ভোটের মাঠে তারা টিকতে পারতেন না। মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই ভোট দিবেন। এবারও জেলার ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করবেন।