দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রের নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌছে দেওয়ার পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের উদ্দেশ্য ব্রিফিং করছেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-আমিন। এ সময় নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৬, সংসদীয় আসন ১০৪। দেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নির্বাচনী এলাকা পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে খুলনা জেলার মধ্যে ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকে প্রার্থীরা আচারণ বিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় উসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আ.লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে চাইলেও আ.লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী চাইছে ভোটের রেজাল্ট পাল্টে দিয়ে আসনটি নিজের দখলে নিতে। এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামানের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহবুবুল আলমের মধ্যে মূল লড়াই হবে। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচনে কয়রা উপজেলায় ৭টি ও পাইকগাছা উপজেলায় ১০টি মোট ১৭টি ইউনিয়ন এবং পাইকগাছা পৌরসভা নিয়ে এই আসনের সীমানা। বর্তমানে এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৬ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৯ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ৭জন প্রার্থী প্রতীদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান (নৌকা), আ.লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহবুবুল আলম (ঈগল), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), বিএনএম প্রার্থী ব্যারিস্টার এসএম নেওয়াজ মোরশেদ (নোঙ্গর), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম (ডাব), ন্যাশনাল পিপুলস পার্টির আবু সুফিয়ান (আম) ও তৃণমূল বিএনপি'র নাদিম উদ্দিন খান (সোনালী আশ) প্রতীক। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পরে প্রার্থীরা আচারণ বিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিচ্ছেন। ভোটের আগের দিন পর্যন্ত তেমন কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। প্রার্থীরা উঠান বেঠাক, পথসভাসহ ভোটারের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা রেছেন। তবে সাধারন ভোটারের মন্তব্য মূল লড়াই হবে ত্রিমুখী, নৌকা, ঈগল ও নোঙ্গর প্রতীকে। জানা গেছে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আ.লীগের স ম বাবর আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির শেখ রাজ্জাক আলী, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দিন আহমেদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সরদার জহুরুল হক, ১৯৯১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক। ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জামাতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ২০০৮ সালে আ.লীগের অ্যাড. সোহরাব আলী সানা, ২০১৪ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বর নির্বাচনে জয়লাভ করেন আ.লীগের মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। তবে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসনে আ.লীগের প্রার্থীরাই ধারাবাহিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মনোনয়ন পেয়েছেন আ.লীগের নেতা মো. রশীদুজ্জামান। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় মনোনয়নে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারের এই আসনে নৌকার শক্ত প্রতিপক্ষ ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম ও বিএনএম এর নোঙ্গর প্রতীকের ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু প্রচারণায় আসেন ভোটের চারদিন আগে থেকে। খুলনা-৬ সংসদ সদস্য ও অভিভাবক কে হচ্ছেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা।