দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ৬টি আসনের বেসরকারী ফলাফলে একটিতে স্বতন্ত্র ও বাকি ৫টিতে নৌকার বিজয় হয়েছে।
রাজশাহী-১ আসনে (তানোর-গোদাগাড়ী) আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনিত নৌকার প্রার্থী এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী আবারো নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতিক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী পেয়েছেন ৪২৪১৯ ভোট।
রাজশাহীর-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা (কাঁচি) বিজয়ী হয়েছেন। চতুর্থবারের মত নৌকা প্রতিকে ভোট করা ওয়ার্কার্সপার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবার নৌকা থেকে ছিটকে গেছেন। এ আসনে ১১২টি কেন্দ্রের ফলাফলে অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৯৬ ভোট এবং তার নিকটতম নৌকা প্রতিকের প্রার্থী এমপি ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট। রাজশাহী সদর আসনে ২২ হাজার ৬৩০ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র কাঁচির প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বিজয়ী হয়েছেন।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নৌকার জয়জয়কার হয়েছে। এখানে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বা অন্য দলের শক্ত প্রার্থী ছিলো না। এ আসন থেকে এবার নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয় পার্টির আবদুস সালাম। আসাদ নৌকা প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৯ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুস সালাম লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৫২৪৭ ভোট।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জয়ী হয়েছে নৌকা। একটি মাত্র উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে আওয়ামী লীগেরই দুই হেবিওয়েট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন আবুল কালাম আজাদ। আর দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন এমপি এনামুল হক। নৌকার প্রার্থী কালাম পেয়েছেন ১০৭০৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এমপি এনামুল হক পেয়েছেন ৫৩৫৬১ ভোট।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। আসনটিতে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ওবায়দুর রহমান (ঈগল)। বেসরকারী ফলাফলে এ আসনে নৌকার প্রার্থী দারা পেয়েছেন ৮৬ হাজার ৯১৩ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুল ঈগল প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৮৩৮৬২ ভোট।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে চতুর্থবারের মত নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রার্থী ও বর্তমান পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অন্য আসনের মতই এ আসনেও শাহরিয়ারের ছিল আওয়ামী লীগেরই শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী। রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন শাহরিয়ার আলম আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান (কাঁচি)। এখানে বেসরকারী ফলাফলে শাহরিয়ার আলম পেয়েছেন (নৌকা) ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৯ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়হান (কাঁচি) পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২৭৮ ভোট। প্রাপ্ত ফলাফলে শাহরিয়ার আলম ২৭ হাজার ৩২১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
রোববার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয় গণনা। রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে একটি একটি কেন্দ্র থেকে ফলাফল আসতে শুরু করে। সবশেষ বেসরকারী ফলাফলে রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ৫টিতেই নৌকার প্রার্থীর বিজয় হয়েছে।
এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এ প্রতিবেদন রোববার রাতে লেখা অবস্থায় রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে গড়ে ৪১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনেই দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য প্রার্থী-ভোটার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ছিলেন ৪১ জন। এর মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে ভোটযুদ্ধে ছিলেন ১০ জন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ৭ জন। আর রাজশাহী-৩ থেকে ৬ নং আসনের প্রত্যেকটিতে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন করে। এবারের নির্বাচনে রাজশাহী জেলায় মোট ভোটার ছিল ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৭১৪। ভোটকেন্দ্র ৭৭০টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩০, নারী ভোটার ১০ লাখ ৯২ হাজার ২৯৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিল ১৮ জন। ভোটকক্ষ ছিল চার হাজার ৯৬৩টি। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে ৯টি উপজেলা, ১৪টি পৌরসভা ও ৭২টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে রাজশাহী-২ আসনটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে। এই সিটির মধ্যে আরএমপির অধীনে এবার চারটি সংসদীয় এলাকায় কেন্দ্র ছিল ২১৩টি। এর মধ্যে ২৪টি ছাড়া অন্য সব কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এসব প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ১২ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্বরত ছিল। আর সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ৩ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ৪ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া পুলিশের ৪৭টি মোবাইল টিম, ২০টি স্ট্রাইকিং টিম, কুইক রেসপন্স টিম, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট কাজ মাঠে ছিল। এর মধ্যে চার প্লাটুন সেনা সদস্য, র্যাবের চারটি দল, সাত প্লাটুন বিজিবি, চার প্লাটুন আনসারও টহলে ছিল। আর নির্বাচনী মাঠে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করেন জুডিশিয়াল এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও।