বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা কাজে সফটওয়্যারের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর উদ্ভাবনও। দেশে সবচেয়ে বেশি সফটওয়্যার আমদানি হয় ব্যাংক খাতে। মোবাইল কম্পানি, তৈরি পোশাকশিল্প, ওষুধ কম্পানি, বড় মাপের করপোরেট হাউসও পিছিয়ে নেই সফটওয়্যার আমদানিতে। প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা, ভোক্তাদের তথ্য সংরক্ষণ, কাজের আধুনিক কৌশল, ভোক্তাদের উন্নত সেবা, তথ্যের আদান-প্রদান, সহজ যোগাযোগসহ বিভিন্ন কাজে মূলত সফটওয়্যার ব্যবহার করছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এসব সফটওয়্যার দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও তৈরি করছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। সফটওয়্যার রপ্তানির মাধ্যমে যে আয় হয় তা জিডিপির ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। কিন্তু তা সত্বেও দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের রপ্তানি আয় বাড়ছে না। এ প্রতিযোগিতায় কিছুটা পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীরা এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। টেকসই ব্যবসার জন্য বাজার সৃষ্টির বিষয়টি অনেকাংশেই চ্যালেঞ্জিং। দেশে অনেক উন্নতমানের সফটওয়্যার তৈরি হলেও বেশির ভাগই আমদানি করা হচ্ছে। বৈশ্বিক মানের সফটওয়্যার এখন বাংলাদেশেও তৈরি হচ্ছে, যা দেশীয় কম্পানিগুলোর সহায়তার পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। অথচ দেশের অনেক বড় বড় কম্পানি দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার না করে বিদেশ থেকে আমদানি করছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, সফটওয়্যার আমদানির সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক কম্পানি বিপুল অঙ্কের অর্থ পাঁচার করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, আইনের মধ্যে থেকে অর্থপাঁচারের নতুন এ কৌশল অনেকে বেছে নিলেও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবে সরকার এ বিষয়ে কিছুই করতে পারছে না। এমনকি বিদেশি সফটওয়্যারের তুলনায় বাংলাদেশি সফটওয়্যারের মূল্য তুলনামূলক কম।
আমাদের দেশের তৈরি সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা অন্যান্য দেশের মতোই সমমানের কিংবা তার থেকেও ভালো। অথচ আমাদের দেশেরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে বিদেশ থেকে এ-জাতীয় পণ্য ও সেবা আমদানি করছে। এতে দেশ থেকে অর্থ চলে যাচ্ছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রসারে এবং দেশ থেকে অর্থ চলে যাওয়া রোধে সরকারের এখনই নজরদারি বাড়ানো উচিত এবং তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।'কোটি কোটি টাকার সফটওয়্যার আমদানি না করে স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে আরো শক্তিশালী আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে হবে। এগুলো ঠিক করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।