দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৫ আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুর-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকি হেরেছেন। মেহের আফরোজ চুমকি গাজীপুর-৫ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তাকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আখতারউজ্জামান এই আসনের সাবেক এমপি ছিলেন। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জিএস ছিলেন। এ ছাড়া গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। আখতারউজ্জামান বেশ পুরোনো রাজনীতিক। তার পুরোনো কাজের পর্যালোচনা, ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এনে ভোটাররা তার প্রতি আকৃষ্ট হন। গাজীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ, পুবাইল ও বাড়ীয়া) আসনে ট্রাক প্রতীকে আখতারউজ্জামান ৮২ হাজার ৭২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ৬৭ হাজার ৭৮৩ ভোট পেয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ। নৌকার প্রার্থী চুমকি হেরে যাওয়ার বিষয়ে কালীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, চুমকি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে তৃণমূলের নেতাদের মূল্যায়ন করতেন না। তাদের ঠিকমতো খোঁজখবর নেননি। এ কারণে তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এলাকায় যে পরিমাণ উন্নয়ন হওয়ার কথা, সেটি হয়নি। নাগরী এলাকাটি থ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বসবাস করেন, তাদেরও তেমন খোঁজখবর রাখেননি। সেটির প্রভাব পড়েছে ভোটের মাঠে। বাড়িয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা এখনও কাঁচা রয়েছে। তিনি এলাকায় কম সময় দিতেন। ফলে গুটিকয়েক লোকজন সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে, যা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলে। বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খান বলেন, মেহের আফরোজ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন। আমার ইউনিয়নে উন্নয়ন খুব কম করেছেন। তিনি হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে চলেছেন। এসব কারণেই তাকে মানুষ ভোট দেননি। খুঁদেবরমী গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, তিনি (চুমকি) ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমাদের এলাকায় আসেননি বলেই চলে। এই এলাকায় এখনও অনেক রাস্তা কাঁচা। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু কারণে জনগণ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী বলেন, আমরা হারের দুটি কারণ বের করেছি। প্রথমত আমাদের এখানে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে, কিন্তু আমাদের এখানে আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৩৫ শতাংশ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত ও বিএনপির ভোটে জয়লাভ করেছেন। আমরা অল্প ব্যবধানে হেরেছি। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসত, তাহলে আমরা হারতাম না। দ্বিতীয়ত বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে ঐক্য ছিল না কয়েকটি কারণে। এর ফলে তারা কেউ প্রকাশ্যে, আবার কেউ কেউ গোপনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে। মূলত হারের পেছনে এই দুটি কারণ বড় বলে মনে করছি। প্রতিক্রিয়া জানতে মেহের আফরোজ চুমকির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতারউজ্জামান বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের ধন্যবাদ জানাই। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে নমিনেশন পাইনি বলে নির্বাচন করিনি। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, এজন্য নির্বাচন করেছি। আমার নামে, পুরোনো পরিচয়ে, অতীত কর্মফল বিশ্লেষণ করেছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক এমপি ছিলাম, ডাকসুর ভিপি/জিএস ছিলাম। সবকিছু মিলিয়ে জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি নির্বাচনে যেসব কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) দিয়েছি, তা তিনটি মাধ্যমে সফল করার চেষ্টা করব।’