শপথ নিতে বঙ্গভবনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে একে একে তারা প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপ্রধানের সরকারি বাসভবনে। সন্ধ্যা সাতটায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।
এই শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। আর বাংলাদেশ সরকারের পঞ্চম মেয়াদে ইতিহাস গড়বেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা পরে শপথ নেবেন। এরপর তারা উপযুক্ত শপথপত্রে স্বাক্ষর করবে। প্রধানমন্ত্রী পরে নবনিযুক্ত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে পদ বণ্টন করবেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো.মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে বঙ্গভবন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘শপথ আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৩০০ অতিথিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে বঙ্গভবন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অতিথিদের দাওয়াতপত্র পাঠিয়েছেন।’
জয়নাল আবেদীন জানান, ‘দরবার হলে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ মঞ্চ প্রস্তুত হয়েছে। সামনের সারিতে অতিথিদের কে কোথায় বসবেন তাদের নামের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে শপথ নেওয়ার সুবিধার জন্য বসানো হয়েছে মাইক স্ট্যান্ড। শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের মাঠে থাকছে আপ্যায়নের ব্যবস্থা।
এর আগে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমোদন দিয়ে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ৩৬ জনের তালিকা সংবলিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ১১ জানুয়ারি আজ বৃহস্পতিবার তাদের বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদে নিয়োগ দান করেছেন।
পূর্ণমন্ত্রীর তালিকায় থাকা ২৫ জনের মধ্যে রয়েছেন: আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (নরসিংদী-৪), আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২), ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩), মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯), মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪), আনিসুল হক (বাহ্মণবাড়িয়া-৪), মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), মো. আবদুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪), সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), মো. আবদুর রহমান (ফরিদপুর-১), নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), আবদুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), মহিবুল হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৯), ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১), মো. ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২), মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), নাজমুল হাসান (কিশোরগঞ্জ-৬)। টেকনোক্র্যাট ক্যাটাগরিতে ইয়াফেস ওসমান ও সামন্ত লাল সেন পূর্ণমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন: বেগম সিমিন হোমেন (রিমি) (গাজীপুর-৪), নসরুল হামিদ (ঢাকা-৩), জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭), মো. মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), বেগম রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২), আহসানুল ইসলাম (টিটু) (টাঙ্গাইল-৬)।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়ে তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে জারি করা হয় প্রজ্ঞাপন। তাতে বলা হয়, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এদিন ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
ভোটগ্রহণ শেষে ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। ঘোষিত ফলাফলে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২২টি আসন পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করে।
ভোটের তিন দিন পর বুধবার শপথ নেন সংসদ সদস্যরা। সেদিন বিকেলেই ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী। আর ১১ জন পাঁচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। বিদায়ী মন্ত্রিসভার ৩০ জন স্থান পাননি নতুন মন্ত্রিসভায়। আর প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছেন ১৪ জন।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলেই ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত পুরনো সরকারের দায়িত্ব শেষ হবে। যারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা ছিলেন, মন্ত্রিসভার শপথের আগেই তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে।