বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “জনগণের আন্দোলন সরকারকে উৎখাত করবে এবং নির্বাচন একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।” অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের বর্তমান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য একটি সত্যিকার ও গতিশীল গণতন্ত্র গঠন করা।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা-যার কারণে জিনিসের দাম আরও বেড়েছে। এর মধ্যে আমেরিকা হুতিদের আক্রমণ করল, এ কারণে অর্থনীতিতে আরেকটা ধাক্কা আসবেই।’ আমি বলতে চাই, ইউক্রেন যুদ্ধসহ কোনো কারণেই বিশ্বের অন্যান্য দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়েনি। মূল্যবৃদ্ধির কারণ মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে কতৃর্ত্ববাদী শাসন কায়েম করে উদ্ভট উন্নয়নের নামে বাংলাদেশে মহাসমারোহে দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে।’
রিজভী বলেন, ‘মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। এটি এখন সর্বজনস্বীকৃত। সরকারদলীয় লোকেরা সমস্ত ব্যাংক লুটে নিয়েছে। মন্ত্রী ও দলীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সব পণ্যের মূল্য এখন আকাশচুম্বী। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা আওয়ামী লীগের লোকজন পাঁচার করে যাচ্ছে। এক কেজি চালের দামে এক কেজি আলু কেনা যায় না। এই সবজির সিজনেও সব সবজি ১০০ থেকে ২০০ টাকার নিচে নয়। পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ আকাশ স্পর্শ করছে। মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় সন্তান বিক্রি করে আহাজারি করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা সুখস্বর্গের মধ্যে বাস করছে বলেই ক্ষুধার্ত জনগণের সঙ্গে মশকরা করতে তাদের বাধে না। সরকারের মহাদুর্নীতি এবং অর্থ ও সম্পদ পাঁচারের কারণেই অর্থনীতিতে বারবার ধাক্কা আসছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, “গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনের পর বিএনপি আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকার যাতে ক্ষমতায় থাকতে না পারে, সেজন্য তারা বিদেশি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা কম্বোডিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা আশা করছে।’ আমি ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলতে চাই, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই বিদেশিদের ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ডামি সরকার গঠন করে আপনারা এখন ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন আপনারা ষড়যন্ত্র খুঁজছেন।”
রিজভী বলেন, ‘৭ জানুয়ারিতে জনগণ আপনাদেরকে চূড়ান্তভাবে লালকার্ড দেখিয়েছে। সেই একদলীয় একতরফা ভুয়া নির্বাচনে ভোটাররা যায়নি। গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাল ভোট ও অনিয়মের হাজারো চিত্র ভাইরাল হয়েছে। শিশুরাও দেদারসে সিল মেরেছে। আগে ভোটকেন্দ্রে গরু-ছাগলসহ চতুস্পদ প্রাণিরা বিচরণ করলেও এবারের নির্বাচনে নতুন সংযোজন হয়েছে বানর। আওয়ামী লীগের পরাজিত দলীয় প্রার্থীরাও এই নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন বলে অভিহিত করেছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আমাদের উন্নয়নে অংশীদার দেশগুলোও তামাশার নির্বাচন বাতিল করে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। গুম, খুন, সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালিয়ে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ঢুকিয়ে একতরফা নির্বাচন আয়োজন করলেও জনগণ বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভুয়া ভোট বর্জন করেছে। নির্বাচনের পর কৃত্রিম আনন্দণ্ডফুর্তিতে মেতে থাকার চেষ্টা করলেও আপনাদের মনে শান্তি নেই। প্রতিনিয়ত ক্ষমতার ভয় তাড়া করছে আপনাদের। কারণ সহিংসতা ও বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনের মধ্য দিয়ে একতরফা নির্বাচন করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি দেশি-বিদেশি লোকদেখানো একদলীয় পাতানো ডামি নির্বাচন এবং চার দিনের মধ্যে বিশ্ব ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে কলংকজনক সরকার গঠনের নজিরবিহীন ঘটনার পরও শেখ হাসিনার মধ্যে নূন্যতম গ্লানি বা অপরাধবোধ নেই। ভোট ডাকাতি, দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অর্থ পাঁচার, হত্যা-গুম খুন, অপকর্মের মহাসাগরে ডুবে থাকলে মানুষ বোধহীন বিবেকহীন অমানুষ হয়ে পড়ে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘এখন অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বসে দেশবাসীর সঙ্গে সস্তা রসিকতা করছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন। ফুরফুরে মেজাজী ঢংয়ে পেয়ারা হিন্দুস্থানের হিন্দি গান শোনাচ্ছেন, রবিন্দ্র সংগীত শোনাচ্ছেন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রদর্শনের জন্য ডামিদের প্রতিযোগিতার আসর বসানোর স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। টুঙ্গিপাড়া মতবিনিময় সভায় শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনে আমি বিস্মিত, হতবাক হয়েছি।’